Saturday 5 December 2020

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

 কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন 

 মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ঝকঝকে হাসি। পরিচ্ছন্ন মুখ। কাজ সুন্দর হয়। তাইতো মুখশ্রী মন জয় করে নেয়। ব্যক্তিত্ব নজর কাড়ে। মুর্শিদাবাদের সোনালীর গল্প সেইরকম। সফল ব্যবসায়ী,সফল মা। ছেলে ব্যাঙ্গালোরে আই টি কর্মী। দীর্ঘ দশ বছর ধরে নিজের হাতেই ষ্টিচ ও ডিজাইনার শাড়ির ব্যবসা সামলানো। নিজের ডিজাইনিং কোর্সও কলকাতা থেকে করে আসা। সেখানেও নিজের ব্যবসা প্রমোট করা। সবটাই সোনালীর নিজের ক্ষমতা ও চেষ্টায়। 

লকডাউনে সেল জিরো। বিশ্ববাংলার হাটে মেলা শুরু।  আবার জেলায় জেলায় মেলার প্রস্তুতি হবে হয়ত। কিন্তু সোনালীরা থেমে থাকেনি। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরেই 'সোনাঝুড়ির হাট' নামিয়ে আনছে তারা। নিজেরাই বসে না থেকে উদ্যোগ নিতে চলেছে। 

সোনালীর গুজরাটি ও কাশ্মিরি  ষ্টিচের শাড়ি মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় শুধু গেছে তা নয়।  আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছে। গেছে দেড়শো গুজরাটি কাজের চাদর ও শাড়ি । খুব প্রশংসিত হয়েছে তার হাতের কাজের শাড়ি। পঁয়ত্রিশ জন মেয়ে  কাজ করে সোনালীর কাছে। মেয়েদের জন্য লকডাউনে চালু রেখেছিল সোনালী কাজ। এবার আশার আলো। মেলা তো শুরু। সেলের খাতায় নয় মাস পর অংক বসানোর পালা! সোনালীদের দক্ষতা নিয়ে বলার মানুষ কম। দেশ পেরিয়ে সুদূর আমেরিকার মাটি জয় করছে সোনালীর ডিজাইন করা  শাড়ি!  মুর্শিদাবাদের এই সফল মহিলাকে না জানলে,না চিনলে নবাবের দেশকে আর কী চেনা!

বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ

Wednesday 2 December 2020

কাঁথা শিল্পী মিলির লকডাউন যাপন

 মিলি খাতুনের লকডাউনের দিন

শিল্পীর সবচেয়ে বড় বিপন্নতা কাজ না করতে পারা। লকডাউনের দিন মিলিরা একরকম দিশেহারা হয়ে পড়ে। চৌদ্দ বছরের প্রতিষ্ঠান মিলির। নাগাড়ে বন্ধ । মিলির কাছে কাজ করে ১৪৫ জন মেয়ে।তাদের পরিবারের দিকে তাকিয়ে মিলি চালিয়ে যেতে থাকে কাজ। ওদের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে মিলির আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে ।ব্যাংক থেকে লোন করতে হয় । নিজের শখের গয়না জমা দিয়েই তারপর  আসে টাকা। 

তিনটি প্রজন্ম শিল্পী। প্রথমে হাতের কাজ ছিল পারিবারিক। তারপর মিলির মা কাজকে বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। মিলি বারো বছর বয়সে জড়িয়ে পড়ে কাজে। তারপর কাজ বাড়তেই থাকে। মহিলা-পুরুষের সমস্ত রকম পোশাক,ব্যাগ এবং ফাইল, বিছানার চাদর,কুশান সবকিছুতেই কাঁথার কাজ করার আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে যায় মিলি। ধীরে ধীরে মেয়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

মিলির কাজ চলতে থাকে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে। ব্যক্তিগত লোনের ভার মাথায়  নিয়েও মেয়েদের কাজ চালিয়ে যায় মিলি। মেলার ভরসায় থাকতে থাকতে অবশেষের দীর্ঘ  দশ মাস পরে সুদিন আসে। বীরভূমের শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মিলি আসলে অন্যের ঘরে আলো জ্বালতে গিয়ে নিজেই প্রদীপের অন্ধকারে এসে পড়ে। তবু ক্ষেদ নেই।  সকলকে নিয়েই প্রতিষ্ঠানের গর্ব বহাল। নিজেই ডিজাইন করে। সুতো ঠিক করে দেয়। তারপর মেয়েদের শিখিয়ে দক্ষ তৈরি করে নেয়। প্রতিনিয়ত মেয়েদের খোঁজ চলতে থাকে। তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে গড়ে-পিটে নিয়ে ভালো কাজ উপহার দেওয়ার এক নেশা মিলিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ব্যবসা  শুধু নয়,মেয়েদের  সম্মানজনক উপায়ে রোজগারের মধ্যে নিয়ে আসা মিলির লক্ষ্য। এবং কাজের সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্য তার প্রথম লক্ষ্য। সেখানে কোনোরকম সমঝোতার জায়গা নেই। 

হাসিমুখে পাড়ি দিয়েছে মিলি কলকাতার ইকো পার্কের মেলায়। লকডাউনের পর মিলির এবার দ্বিতীয়  মেলায় যোগদান। মাথায় ঋণের বোঝা। তবু মেয়েদের লকডাউনের মধ্যে মেয়েদের হাতের তৈরি জিনিষ বিক্রী করতেই হবে! ক্রেতাদের দিতে হবে নতুন ডিজাইনের উন্নত মানের জিনিষ। লকডাউনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রামে প্রতিষ্ঠানের মেয়েরাই ছিল একমাত্র সাথী। তাদের জন্যই মিলির দৌড় চলছেই। তবু কিঞ্চিৎ হতাশা। মহিলা ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকার যদি আর একটু সদয় হোত। তবে এই লড়াই বুঝি একটু সহজ হয়ে যেত। এতবড় বিপদ তো একেবারেই প্রথম দেখা! 

বীরভূম।


কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...