Monday 16 November 2020

মহিলা মাইগ্রান্ট লেবারের আনলকডাউন যাপন



চম্পা-পারভিন-সরিফা-আর্জিনাদের আনলকডাউনের দিন  

মাইগ্রান্ট লেবার আর্জিনার বয়স সাতাশ। চেন্নাইয়ে নামী অন্তর্বাস কোম্পানীর কাজে হাতেখড়ি। সেখানে মাসে রোজগার ছিল সাত হাজার। তারপর ঠিকানা ছিল লুধিয়ানা। এখানে ছিল টায়ারের ফ্যাক্টরিতে কাজ। সাত মাস কাজ হতেই লকডাউনের ঘোষণা। মাস মাইনে ছিল দশ হাজার। আট মাস ধরে গ্রামে। কাজ নেই। দুটি বাচ্চা। এদের পড়ানোর জন্য টাকা উপার্জন জরুরি । কিন্তু ফেরার উপায় নেই। প্লেন ভাড়ার ক্ষমতাও নেই। ঘরে বসে কী করা যায়? ভেবেই চলেছে দিনরাত। হাতের কাছে উপায় বলতে গ্রামে এক টেলার সেলাই শেখাচ্ছে। তার কাছেই কাজ শেখার কথা ভাবছে আর্জিনা।

মাইগ্রান্ট লেবার রেখার বয়স পঁচিশ। লুধিয়ানায় স্টিল ফ্যাক্টরিতে করত কাজ। দশ মাস পরেই লকডাউন ঘোষণা। মাসে পেত সাত হাজার টাকা। তামা-পেতল আলাদা করা ছিল কাজ। ঘরে ফিরে কাজ নেই। একটিই বাচ্চা। সংসার ছোটো কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কারও কাজ নেই। তবু সংসার চালাতে হাত পাততে হচ্ছে স্বামীর কাছেই। সেখানেও উত্তর 'নেই'। সেটা শুনেও ক্লান্তি আসছে।

সরিফা মাধ্যমিক পাশ। নাট বল্টুর কারখানায় কাজ করত লুধিয়ানায়। পেত সাত হাজার টাকা। লকডাউনে ঘরে ফেরে।এখন ফাঁকা হাত। আবার কবে কাজে ফিরবে নিশ্চয়তা নেই।

চম্পা সাইকেলের রিম তৈরির কারখান্য কাজ করত। পেত সাড়ে ছয় হাজার টাকা। ঘরে ফিরে বিরাট সমস্যা। দুই মেয়ে। সংসারে ভরসা রেশনের চাল ও বাচ্চাদের স্কুলের মিড ডে মিলের চাল-ছোলা--আলু। সংসারের হাল ফেরাতে এখন হাঁস-মুরগি পালনের কথা ভাবছে!

পারভিনার বয়স তিরিশ। নাট বলটুর কারখানায় ছিল কাজ। লকডাউনে বাড়ি ফিরে আসা। মাসে সাত হাজার টাকা পেত। এখন ঘরে বয়সে থাকা। সময় কাটছে না। অন্যদিকে অভাবও দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

গ্রামে মেয়েদের সামনে সেল্ফ হেল্প গ্রুপের কাজ ছিল বড় বিকল্প। এখন আটমাস ধরে তালা পড়েছে সেখানেও। এখন মহিলা মাইগ্রান্ট লেবারদের সামনে দুটি বিকল্প জীবিকা। পশুপালন ও টেলারিং। কিন্তু কোনোটিতেই স্থায়ীভাবে রোজগারের আশা নেই। কাজ নতুন করে শিখে শুরু করা কঠিন। প্রশিক্ষণের জন্য সময় দরকার।রাজ্যের বাইরের কাজ আটমাস পরে ফিরে পাওয়া অসম্ভব। ফিরে যাওয়ার উপায় আপাতত বন্ধ। তাই এরা ধুঁকছে। খাবার জুটছে কোনোরকমে কিন্তু স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার স্বাদ খুঁজে ফিরছে।

মাইগ্রান্ট লেবার সরিফা-পারভিনদের সকলের একটাই কথা- "মেয়েদের হাতে কিছু পয়সা না থাকলে সম্মান থাকে না সংসারে!" সব মেয়ের বাবারা যদি বুঝত! তবে হয়ত বিয়ের জন্য পয়সা না জমিয়ে মেয়েদের স্বনির্ভর করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করত। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের মতই সম্মান জরুরি। অসম্মানের জীবনে খাবারেও পেট ভরে না। অন্যদিকে মেয়েদের অর্থনৈতিক অধিকারের বিষয়ে অনেক বেশি করে প্রশাসনিক তৎপরতা প্রয়োজন। মহিলা মাইগ্রান্ট লেবারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় নীতিও জরুরি। কিন্তু ভাবছে কি কেউ? নাকি এমন অবস্থা মেনে নেওয়াটাই স্বাভাবিক এমন মত প্রতিষ্ঠা হয়ে যাচ্ছে!

হরিহরপাড়া,মুর্শিদাবাদ


No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...