Friday 30 October 2020

অ্যাসিড আক্রান্ত মিলার লকডাউন যাপন

 ্মিলার লকডাউনের দিন

অসহায় বাবা  গাজন শেখ ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন 'মিলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল।'  যে নিয়ে পালাল সেই  ছেলেই  মিলাকে গত বছর অ্যাসিড ছুড়েছিল। আপাতত মিলা সেই  ছেলের  বাড়িতেই। মিলার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পরে  মিলা  ছাড়াও  পায়। যদিও ছেলে জামিন পায় না। মিলা তখন দশম শ্রেণি। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জানালা দিয়ে অ্যাসিড ছোঁড়া হয় মিলার মুখে। একবছর ধরে নিজে সেরে ওঠার যাবতীয় লড়াই এর পর পরিবারে মুখে হাসি ফোটে। লকডাউনের মধ্যেই মিলার নানা অসুস্থ হয়। তাকে দেখতে যাওয়ার দিনই ভোরবেলা মিলা গায়েব।


 ভাবতে অবাক লাগে এদেশে একদা সোনার আংটি বাঁকা হলেও দামি  ছিল শুধু তা নয়! অ্যাসিডে  আবার  বদমাস মেয়েরাই আক্রান্ত হয়। । কাকতালীয় ভাবে চলে যাওয়ার  দিনই মিলা আঠারো বছরের প্রাপ্তবয়স্ক  হয়।  বাবার চায়ের দোকান। লকডাউনে বন্ধ দীর্ঘদিন। ঘরে অভাব। দুই শিবির। মেয়ের পরিবার নিরক্ষর,একা। অন্যদিকে ছেলের পক্ষে সবাই। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ছেলের অ্যাসিড মারার অপরাধকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে! অপরাধী আর প্রেমিকের মধ্যে ফারাক কজনই বা করতে পারে? দেখার দৃষ্টিটাই তো গড়তে দেওয়া হয় না। এই ছেলেটি প্রথমে স্টকার ছিল। মিলাকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিল।পরিবার রাজি না হওয়ায় আক্রমণ। আমাদের দেশে এখনও  প্রতিদিন পেছনে আসা,দীর্ঘদিন ফলো করা ছেলেটিকে প্রেমিক বলেই ধরা হয়। এবং একদিন  এক স্টকারের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে! রোমান্সের এইরকম সফট চার্মেই ভুক্তভোগীরও এই  বিশ্বাস গড়ে দেওয়া হয়  যে স্বামীর আসিড ছোঁড়া হাত সংসারে পড়লে আদরের হয়ে উঠবে।

মিলার উপর ঠিক কি ধরণের চাপ এসেছিল তা এখনই হয়ত জানা গেল না! কিন্তু মিলার সঙ্গে এমপ্যাথি থাক আমাদের। এমপাওয়ারমেন্টের এও এক বড় শর্ত। মিলার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘাতকের   হাত থেকে মিলাকে বাঁচানো গেল না। সামাজিক অপমান,পারিবারিক অভিমান?  কী সেই ভাবনা মিলাকে ঘাতকের সাহচর্যে নিয়ে গেল এবং জুড়ে দিল তা  আড়ালেই থাকল। এরপরেও কনসেন্ট, ডিসিশন মেকিং এর ক্ষমতা যদি এই জীবন গড়ে দিতে পারে! অপেক্ষা সেদিনের!এভাবেই আসিডে পুড়ে যাওয়া মেয়েগুলো খবরের শিরোণাম থেকে হারিয়ে যায়! এদের লড়াই ধীরে ধীরে পারিবারিক লক্ষণরেখায় আটকে পড়ে। মিলা হাসিমুখে  ফিরবে একদিন  সেই বৃত্তে ইতি টেনে। আশা জাগে মনে।

ভরতপুর,মূর্শিদাবাদ

  


Sunday 11 October 2020

 বাউল শিল্পী আশালতার লকডাউনের দিন

দীর্ঘ ছয়মাস অপেক্ষা। তারপর লোকশিল্পীদের মুখে হাসি ফুটল। বাউল শিল্পী আশালতা অবশেষে বরাত পেল   প্রোগ্রামের। পর পর তিনটি। এতদিন মাসে মাসে শিল্পীভাতার হাজার টাকা জমা পড়ছিল। কিন্তু  মনে শান্তি ছিল না। ঘরে বন্ধ থাকতে থাকতে  অস্থির হচ্ছিল মন। অন্যদিকে  সামাজিক দূরত্বের কারণে দলের রেওয়াজও ছিল বন্ধ। আনলক-৫ ভাগ্যের  তালা খুলেছে আশালতার। পুজার আগেই তিনটি অনুষ্ঠানের তিন হাজার টাকা এসেছে। আশালতার  আনন্দের শেষ নেই।

লকডাউনের পর থেকেই মনমরা ছিল আশালতা। বাতিল হয়েছিল নিজেদের সাত জনের  দলের প্রোগ্রামও । অন্যদিকে সরকারি অনুষ্ঠানও ছিল বন্ধ। সব মিলিয়ে খুব কষ্টের যাপন ছিল আশালতার। স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। সেও বেকার বাড়িতে বসে। পারিবারিক অভাবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল গান না গাইতে পারার কষ্ট। নিজের বলতে আশালতার এই বাউলগানটাই। আছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সবাই স্কুলে পড়ে। কিন্তু  স্কুলও বন্ধ। পারিবারিক চাপও  ছিল আশালতার মাথার উপর। আপাতত সেসবে একটুখানি ছেদ পড়ল।



শেষমেশ আশা সব কাটিয়ে কাজে ফিরল। সূযোগও সামনে এসে গেল। পথশ্রীর জন্য,কৃষি বিলের প্রতিবাদে গান বাঁধল আশারা। সামনে দিকে চোখ সাজিয়ে এখন  আগামীর অপেক্ষা।

গনকর,মুর্শিদাবাদ

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...