Sunday 27 September 2020

প্রতিমা শিলপী অনামিকা,দিপালী,ছবির লকডাউনের দিন

প্রতিমা শিলপী অনামিকা,দিপালী,ছবির লকডাউন যাপন 

পুজো চলে এসেছে। কিন্তু প্রতিমাশিল্পীদের সকলেরই আগের মত হাতে কাজ নেই। গতবারই ছিল আঠেরোটি পুজার বায়না। এবারে মাত্র ছয়টি। তাও আবার আগেরবছরের তুলনায় অর্ধেকের কম বায়না। অনামিকা পটুয়া, দিপালী ও ছবি পটুয়ায় মন তাই স্বভাবতই খারাপ। স্বামীরা ঘুরে ঘুরে এর বেশি বায়না জোগাড় করতে পারেনি। আবার প্রতি বছর কয়েকটি পটুয়া ও ঘোষ ঘর মিলে নিজেদের দুর্গাপুজা হয়। সেটাও বন্ধ। দুর্গাপুজার বায়না সেরকম না মেলায় নিজেদের পুজাটারও বাজেট জোগাড় করা যায় নি। প্রায় ১২ বছরের বেশিদিন ধরে চিত্রকরদের নিজেস্ব পাড়ার দুর্গাপুজা তাই বন্ধ। মনমরা বাতাবরণ মুর্শিদাবাদ গনকর চিত্রকর পাড়ায়।


প্রতিবছরের ব্যস্ত সময়ে এবারে যোগ হয়েছে অন্য শুন্যতা। অনামিকাদের আবার কাজে বাধ সেধেছে রাস্তা। খারাপ রাস্তা দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া কঠিন। সে ভেবেও হয়ত কেউ কেউ আসে নি ঠাকুরের অর্ডার নিতে। এমনটা দিপালীদেরও মনে হচ্ছে। প্রতিমা তৈরির ঘরানায় বাড়ির সকলে যুক্ত। দিপালী পটুয়ার মেয়ে পিয়ালী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। মা -মেয়ে মিলে বারো দিনেই একটা ঠাকুর করে ফেলে। আট থেকে বারো হাজার টাকা ঠাকুরপিছু পায়। কাজ শেষে আড়াই থেকে চার হাজার টাকা নিজেদের থাকে। সারাবছরে দুর্গাপুজার সময় বড় উপার্জন সেটাও এবারে হল না। প্রতিমা তৈরি একমাত্র জীবিকা দীপালিদের। সেখানেও বড্ড মুশকিলের মুখোমুখি এবারে। তবুও কাজ চলছে সেই আগের উৎসাহ নিয়েই। মুখে হাসি অমলিন মহিলা পটুয়াশিল্পীদের।

গণকর,রঘুনাথগঞ্জ,মুর্শিদাবাদ

Thursday 17 September 2020

মিড ডে মিল রাঁধুনির লকডাউন যাপন

 মিড ডে মিল রাঁধুনিপুষ্পর লকডাউনের দিন

পুষ্পরানি এক নক্ষত্রের নাম হতে পারত। কিন্তু আসলে এক  মায়ের নাম। এক সৎ ও  নিষ্ঠাবান শ্রমজীবীর নাম।  স্কুলের মুখ দেখা হয়নি! পড়াশুনা শেখা হয়নি। তাতে কি!  ছেলে এম টেক করেছে। মেয়ে এম এ পাশ করে বিএড করেছে। দুজনেই চাকরির অপেক্ষায়। লকডাউনের দিনে ছেলের চাকরি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রান্নার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। সেটাও বন্ধ। তবু মিড ডে মিলের দিনগুলিতে হাজিরার ব্যস্ততা আছে। বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ চলছে।

প্রথমে বিড়ি বাঁধা দিয়ে উপার্জন শুরু। তারপর পরিচারিকার কাজ।  দুটি বাড়িতে  রান্নার কাজ। মিড ডে মিলের রান্নার  কাজে যোগ দেওয়া।  সংসার চালাতে অর্থের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে ঘুরে পুষ্প জোগাড় করেছে কাজ।

উত্তরণের  গল্পগুলো কেমন যেন মেঘে ঢাকা তারার মত ভেসে ওঠার অপেক্ষায়। মুর্শিদাবাদের পুষ্পরানি হালদার  সত্যিই ওম্যানফোকের রানি। অনেক আদর আর ভালোবাসায় এই রানির আঁচল ফুলে ফুলে ভরে দেওয়ার কথা। মুখে আটকানো বাড়ির মোটা কাপড় ছেঁড়া। দুই প্রান্ত দুই দিকে  সুতো দিয়ে বেঁধে হয়েছে মাস্ক। হাতে প্রায় অকেজো এক  মোবাইল। একটা বাটন বার তিনেক ঘাটলে পরে সাড়া দেয়। তাতেই নাম্বার খুঁজে   ডায়াল করে পুষ্প। নিজের নাম্বার তো জানেই না। চোখে - মুখে একটা অসহায়তার ছাপ এসেও যেন মিলিয়ে যায়!  লড়াই এ টিঁকে থাকার এক নিরীহ দম্ভ  ফুটে ওঠে ছেলে -মেয়ের কথায়। স্বামী ঠোঙা  তৈরি করত। পাশে নেই ছয় বছরের বেশি। পুষ্পকে এই দূর্দিনও ভেঙে দিতে পারেনি। দুই সন্তানকে  সামনের দিকে এগিয়ে দিতে  নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।

নিজের শ্রম আর খেটে খাওয়ার ক্ষমতাটুকুও জীবনের বড় সম্পদ। আর্থিক  ও সামাজিক প্রতিকূলতাকে পরাস্ত করে দিশা খুঁজে বের করতে  পুষ্প এক বড় উদাহরণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পরের প্রজন্মকে শিক্ষাঙ্গন থেকেই  প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প নেওয়া বড় কঠিন কাজ। সমাজের  প্রথম সারির অনেক মানুষের সঙ্গে তাই  পুষ্পর নাম উচ্চারণ হওয়ার কথা! জীবিকার সন্ধানে হয়ে ওঠা এক  মেইড সারভ্যান্ট  ও কুকের ছেলে এম টেক করে, মেয়ে এম এ পাশ করে তখন সমাজকে আরেক বার  এই হ্যাভস নট দের দিকে ফিরে দেখতে হয়! এক মহিলার স্বপ্ন দেখার স্পর্ধাকে কুর্নিশ করতে হয়!

জঙ্গীপুর,মুর্শিদাবাদ

Friday 11 September 2020

রুপার লকডাউন যাপন

 রুপার লকডাউনের দিন

রূপা বর্ধন পালের কাজটা চলে গেল। লকডাউনের মধ্যেই বলে দিল -আর আসতে হবে না। একটি ডাক্তারের চেম্বারে নাম লেখার কাজ করতে রুপা। সারা ভারতেই অসংগঠিত শ্রমিকের কপালে যে দূর্ভোগ লেখা ছিল লকডাউনে  তা থেকে রেহাই পেল না রূপাও। অনেক অনুরোধের পরও থাকল না চাকরি। এক মাসের বাড়তি টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। এই লকডাউনে যে নিপাট বেকার থেকে কাটাতে হবে তা জানানোর  পরও মালিকের মন গলানো গেল না।  রূপা বেকার হয়ে গেল। পাঁচ হাজার টাকার চাকরিই ছিল বাবা হারা পরিবারে  রূপারএকমাত্র মেয়ের সম্বল। রূপার জীবন যুদ্ধের গল্পের মত।


মাত্র ৩০ বছর বয়স। সদ্য স্বামী  মারা গেছে। ছিল  চায়ের দোকান । যৌথ সংসার। এখন সেখানে দেওরের  মালিকানা।  মাধ্যমিক পাশ। কম্পিউটার কোর্সে  ডিপ্লোমা আছে। রুপা মাত্র ৩ বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয় ।এখনো লাঠি হাতেই হাঁটে। নিজে প্রচণ্ড লড়াই করে পড়াশুনা করেছে। বেলেঘাটায় ৬ মাস করে ট্রিটমেন্ট চলেছে। তারপর ফিরে এসে চালিয়েছে পরীক্ষা ও পড়া। রুপা নিজে খুব ঘরোয়া। নিজের শারীরিক চ্যালেঞ্জ কে হার মানিয়ে  স্বামীকে নিয়ে গেল ব্যাঙ্গালোর। স্বামী ছাড়া কেউ নেই। তাই নিজে বন্ধন  থেকে লোন নিয়ে স্বামীর চিকিৎসায় পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু বাঁচল না স্বামী। স্বামীর চায়ের দোকানেও বসতে  রাজি ছিল সে কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে আপত্তি থাকায় সেটাও হল না। 

অনেক জায়গায় কাজের সন্ধান করে ক্লান্ত হয়ে ফিরছে রূপা। কিন্তু লকডাউনে কাজ মেলা প্রায় অসম্ভব। এখন অপেক্ষা শুধু স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার।

বহরমপুর ,মুর্শিদাবাদ  


কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...