মিড ডে মিল রাঁধুনিপুষ্পর লকডাউনের দিন
পুষ্পরানি এক নক্ষত্রের নাম হতে পারত। কিন্তু আসলে এক মায়ের নাম। এক সৎ ও নিষ্ঠাবান শ্রমজীবীর নাম। স্কুলের মুখ দেখা হয়নি! পড়াশুনা শেখা হয়নি। তাতে কি! ছেলে এম টেক করেছে। মেয়ে এম এ পাশ করে বিএড করেছে। দুজনেই চাকরির অপেক্ষায়। লকডাউনের দিনে ছেলের চাকরি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রান্নার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। সেটাও বন্ধ। তবু মিড ডে মিলের দিনগুলিতে হাজিরার ব্যস্ততা আছে। বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ চলছে।
প্রথমে বিড়ি বাঁধা দিয়ে উপার্জন শুরু। তারপর পরিচারিকার কাজ। দুটি বাড়িতে রান্নার কাজ। মিড ডে মিলের রান্নার কাজে যোগ দেওয়া। সংসার চালাতে অর্থের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে ঘুরে পুষ্প জোগাড় করেছে কাজ।
উত্তরণের গল্পগুলো কেমন যেন মেঘে ঢাকা তারার মত ভেসে ওঠার অপেক্ষায়। মুর্শিদাবাদের পুষ্পরানি হালদার সত্যিই ওম্যানফোকের রানি। অনেক আদর আর ভালোবাসায় এই রানির আঁচল ফুলে ফুলে ভরে দেওয়ার কথা। মুখে আটকানো বাড়ির মোটা কাপড় ছেঁড়া। দুই প্রান্ত দুই দিকে সুতো দিয়ে বেঁধে হয়েছে মাস্ক। হাতে প্রায় অকেজো এক মোবাইল। একটা বাটন বার তিনেক ঘাটলে পরে সাড়া দেয়। তাতেই নাম্বার খুঁজে ডায়াল করে পুষ্প। নিজের নাম্বার তো জানেই না। চোখে - মুখে একটা অসহায়তার ছাপ এসেও যেন মিলিয়ে যায়! লড়াই এ টিঁকে থাকার এক নিরীহ দম্ভ ফুটে ওঠে ছেলে -মেয়ের কথায়। স্বামী ঠোঙা তৈরি করত। পাশে নেই ছয় বছরের বেশি। পুষ্পকে এই দূর্দিনও ভেঙে দিতে পারেনি। দুই সন্তানকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।
নিজের শ্রম আর খেটে খাওয়ার ক্ষমতাটুকুও জীবনের বড় সম্পদ। আর্থিক ও সামাজিক প্রতিকূলতাকে পরাস্ত করে দিশা খুঁজে বের করতে পুষ্প এক বড় উদাহরণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পরের প্রজন্মকে শিক্ষাঙ্গন থেকেই প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প নেওয়া বড় কঠিন কাজ। সমাজের প্রথম সারির অনেক মানুষের সঙ্গে তাই পুষ্পর নাম উচ্চারণ হওয়ার কথা! জীবিকার সন্ধানে হয়ে ওঠা এক মেইড সারভ্যান্ট ও কুকের ছেলে এম টেক করে, মেয়ে এম এ পাশ করে তখন সমাজকে আরেক বার এই হ্যাভস নট দের দিকে ফিরে দেখতে হয়! এক মহিলার স্বপ্ন দেখার স্পর্ধাকে কুর্নিশ করতে হয়!
জঙ্গীপুর,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment