Friday, 11 September 2020

রুপার লকডাউন যাপন

 রুপার লকডাউনের দিন

রূপা বর্ধন পালের কাজটা চলে গেল। লকডাউনের মধ্যেই বলে দিল -আর আসতে হবে না। একটি ডাক্তারের চেম্বারে নাম লেখার কাজ করতে রুপা। সারা ভারতেই অসংগঠিত শ্রমিকের কপালে যে দূর্ভোগ লেখা ছিল লকডাউনে  তা থেকে রেহাই পেল না রূপাও। অনেক অনুরোধের পরও থাকল না চাকরি। এক মাসের বাড়তি টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। এই লকডাউনে যে নিপাট বেকার থেকে কাটাতে হবে তা জানানোর  পরও মালিকের মন গলানো গেল না।  রূপা বেকার হয়ে গেল। পাঁচ হাজার টাকার চাকরিই ছিল বাবা হারা পরিবারে  রূপারএকমাত্র মেয়ের সম্বল। রূপার জীবন যুদ্ধের গল্পের মত।


মাত্র ৩০ বছর বয়স। সদ্য স্বামী  মারা গেছে। ছিল  চায়ের দোকান । যৌথ সংসার। এখন সেখানে দেওরের  মালিকানা।  মাধ্যমিক পাশ। কম্পিউটার কোর্সে  ডিপ্লোমা আছে। রুপা মাত্র ৩ বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয় ।এখনো লাঠি হাতেই হাঁটে। নিজে প্রচণ্ড লড়াই করে পড়াশুনা করেছে। বেলেঘাটায় ৬ মাস করে ট্রিটমেন্ট চলেছে। তারপর ফিরে এসে চালিয়েছে পরীক্ষা ও পড়া। রুপা নিজে খুব ঘরোয়া। নিজের শারীরিক চ্যালেঞ্জ কে হার মানিয়ে  স্বামীকে নিয়ে গেল ব্যাঙ্গালোর। স্বামী ছাড়া কেউ নেই। তাই নিজে বন্ধন  থেকে লোন নিয়ে স্বামীর চিকিৎসায় পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু বাঁচল না স্বামী। স্বামীর চায়ের দোকানেও বসতে  রাজি ছিল সে কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে আপত্তি থাকায় সেটাও হল না। 

অনেক জায়গায় কাজের সন্ধান করে ক্লান্ত হয়ে ফিরছে রূপা। কিন্তু লকডাউনে কাজ মেলা প্রায় অসম্ভব। এখন অপেক্ষা শুধু স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার।

বহরমপুর ,মুর্শিদাবাদ  


No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...