Tuesday 21 April 2020

বিড়ি শ্রমিক ফরজনার লকডাউনের দিন

ফরজনার লকডাউনের যাপন

বাচ্চা কটা জিজ্ঞাসা করতেই ফরজনা চমকে ওঠে। কোলের বাচ্চাকে দেখিয়ে বলে,"এই তো!" পাশে আরও তিনটে বাচ্চা কাড়াকাড়ি করছে একটি বাটি নিয়ে। কি খাচ্ছ ? উত্তর দেয়, "চাল ভাজা।" এরা কারা? জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেলে ফরজনা। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, "বাচ্চাদের খেতে দিতে পারি না কি বলব! সব কটাই আমার বাচ্চা।" চার সন্তানের মা ফরজনা। ছাতু আর চালভাজা মায়ের বাড়ি থেকে দিয়ে গেছে বাচ্চাদের জন্য। খাবার কিছু নাই যে! বিড়ি বেঁধে চালায় বাচ্চাদের পেট ফরজনা । স্বামী বাইরে কাজে যায় বছরে একবার। যে কটা টাকা স্বামী নিয়ে এসেছিল তা দিয়ে চারদিক খোলা ঘর ঢেকেছিল ফরজনা শীতের সময়। কাজে যাওয়ার কথা ছিল মার্চ মাসে। বন্ধ হয়ে গেল। নিজের বিড়িও বন্ধ। কি করে কাটছে দিন? মাথায় কাপড় টেনে ফরজনা বলে, "কাল থেকে চুলা জ্বলেনি। মেয়ে মানুষ,কোথায় চাইতে যাবো?" স্বামী আলঙ্গীর লজ্জায় মাথা খেয়ে বলে, "চা করে দিতাম কিন্তু ঘরে কেরোসিন শেষ। তারপর অন্যমনস্ক হয়ে বলে, অভাবের সংসারে চারটি ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে। স্বামী-স্ত্রীর না খেয়ে মরতে ভয় নেই। কিন্তু বাচ্চাগুলো নিয়ে এখন কি করি! ভিক্ষা করতে যাবো তারও উপায় নেই।"

ফরজনা বলে, সরকার ঘরে থাকতে বলেছে। আমাদের তো ঘর নেই,ত্রিপল দিয়ে ঘর বেঁধেছি। ঝড় আসছে,বৃষ্টি আসছে আবার ভাইরাসও আসছে এখন। গরীবের জান সব সহ্য করতে পারে। শুধু ক্ষিদেটাই বেশি লাগে অভাবের দিনে।"



ছবি দেবেন একটা? হাসিমুখে ফরজনা বলে, "একটু দাঁড়ান, শাড়ি পড়ে আসি একটা।" একদম রানীর মত বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে পড়ল ফরজনা। স্বামীও যেন সুলতান! চোখের কোনে তখনও জল শুকায়নি ফরজনার। এরা ভোট দেয়। ভোটের পর ফেলে দেওয়া প্ল্যাকার্ড দিয়ে দেওয়াল ভাঙা ঘরে নিজেদের আব্রু বাঁচায়। এরা বিশ্বাস করে অভাবের কপাল বদলাবার নয়। কিন্তু কোলের ছোট্ট মেয়েটি সে কি জানে খেতে না পাওয়াটাও জীবনের একটা ধর্ম? বা ফরজনার ঐ বাচ্চাগুলো যারা এক বাটি চালভাজা নিয়ে তিনজন মিলে কাড়াকাড়ি করছিল ওরাও কি বোঝে কেন ওদের ভরপেট খাবারের অধিকার নেই? ওরাও তো দেশের ভবিষ্যৎ।
ইমামনগর,লালখানদিয়ার,মুর্শিদাবাদ।

No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...