মালতীর লকডাউনের দিন
বছর চল্লিশের মালতী। স্বামী সুই মুর্মু মাঠে খাটে। লকডাউনে মাঠের কাজ বন্ধ। ঘরে বসেই দিন কাটছে।মালতীও মাঠে কাজ করে। কিন্তু পয়সা রাখতে পারেনা। স্বামী পয়সা নিয়ে চলে যায় কখন টের পায় না। চাষের মাঠ থেকে দুজনে মিলে যেটুকু ধান পায় তা কেনা-বেচা করেই চলে বছর। এবারে হঠাৎ লকডাউন গুলিয়ে দিয়েছে মালতীদের জীবন। প্রতিদিনের খাওয়া কোনোদিনই নিশ্চিত ছিল না। তবু চলে যেত ভাত-রুটি বদল করে দিন। এবারে সমস্যা ঘরে বসা স্বামীকে নিয়ে। কাজ না থাকলেও নানারকম চাহিদা ও নেশা আছে। তাতে পয়সা লাগে। সেটা না পেলেই বাড়িতে অশান্তি বাড়ছে। এতদিন মাঠে কাজ করে এসেই বাড়ির পুরষ শান্ত থাকত। কাজ না থাকলেও অন্য ব্যস্ততা থাকত। লকডাউনে বেড়েছে অত্যাচার। কাজ নেই কিন্তু অনান্য চাহিদা বেড়েছে।
মালতীদের জীবনে শিক্ষার কোনও জায়গা নেই। বড় হয়েছে অভাবের পরিবারে। বিদ্যালয়ের মুখ দেখা হয়নি। বিয়েটাই বেঁচে থাকার একমাত্র লক্ষ্য বলে জানা ছিল। এটাই ছিল পারিবারিক দায়। তাই বিয়ে একদিন হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু জীবনে ভালো কিছু পাওয়ার গ্যারান্টি ছিল না। জন্মস্থলে ও সংসারে অবস্থার কোনও বদল হয়নি। দারিদ্র ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় কাছের বন্ধু। মালতী নিজেও জানে সে অপুষ্টির শিকার। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলেও কেনার ক্ষমতা নেই। তাই এভাবেই চলছে দিন। এর মধ্যেই এসে পড়েছে লকডাউনের অভিশাপ।
মালতীর লকডাউনের সময় রাতে শুধু শুটকি মাছ আর লবন। দিনে ভাত সেদ্ধ। ঘরে চা পাতা আছে পড়ে সামান্য। চিনি নেই। বিস্কুটও নেই। এদিকে ইনকাম ও বন্ধ। পাশের বাড়ির সঙ্গে ধান-চাল বিনিময় করে আর কতদিন! ফুরিয়ে আসছে ঘরের জিনিষ একে একে। মালতীদের দিন বড় আবার রাতও পাল্লা দিয়ে বড় হচ্ছে! এখন সকালের অপেক্ষা। কিন্তু ভোরের আলোতেও সেই এক অন্ধকার! ভাগ্যে লকডাউন জীবনভর।
নবগ্রাম,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment