Monday, 1 June 2020

জুলিয়ানা হাঁসদার কোভিডকাল যাপন

 জুলিয়ানার লকডাউনের দিন

সভ্যতা মানুষকে শিক্ষিত করে। জীবনের জন্য প্রয়োজনের সব উন্নত কিছুর হদিস দেয়। পদে পদে অমসৃনতার  সামনে পড়া সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে শেখায়। কিন্তু সেই সুসজ্জিত সভ্যতার এক কোনায় যখন অন্ধকারের যাপন নজরে আসে তখন থমকে যেতে হয়। পিছুটান হাতছানি দেয়। এই অসহায় মুখগুলিকে আলোর সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড় না করতে পারার জন্য অনুশোচনা হয়। এই যন্ত্রণা নিয়ে  আর যাই হোক নিজেকে সুসভ্যতার অংশীদার বলে দাবী করা যায়না। চিকিৎসা ও প্রযুক্তির শিখরে থাকা দেশের কোনও প্রান্তের মানুষ যখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং অসুখের সঙ্গেই বাস করাকেই ভবিতব্য মনে করে তখন বিজ্ঞানও লজ্জায় মুখ লুকায়। জুলিয়ানা হাঁসদার লকডাউনের দিন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ক্লান্ত হয়। বেঁচে থাকার অধিকার তো মানুষের মৌলিক অধিকার। খাওয়া ও চিকিৎসার অধিকার তো এর মধ্যেই পড়ে! কিন্তু একাংশ তা থেকে বঞ্চিত কেন হবে! জুলিয়ানাসহ দুই বাচ্চাকে দেখে মনে হল এ যেন আফ্রিকার কোনও অঞ্চলের বুভুক্ষ মানুষের ছবি। যেমন গুগুলে সার্চ করে পাওয়া যায়! অপুষ্টি,বিকলাঙ্গ অসহায় এই বাচ্চা দুটিও এই দেশের ভবিষ্যৎ। তবু নিউ ইন্ডিয়ার সাইনিং এদের মুখে পড়তে ভয় পায়!   

জুলিয়ানার দুই ছেলে। একটির ছয় ও অন্যটির দুই। দুটি বাচ্চাই ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ। ডাক্তার বলেছে দুইজনের সার্জারি করতে হবে। পয়সা নেই। কোনও উপায় না দেখে জুলিয়ানা ছেলেকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে পালিয়ে আসে। তারপর ছেলে ভর্তি হয় ক্লাস ওয়ান এ। সেখানে সে বুলিং এর শিকার । এই পোড়া দেশে অসুখের নামেও ফান হয়। সহানুভূতির বদলে ল্যাংড়া বলে ডাকা হয়। ছেলে কদিন বিদ্যালয়ে যেতে পারবে জানেনা জুলিয়ানা! শুধু জুলিয়ানার বিশ্বাস ভগবান তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু করবে না। ছেলেদের ভগবান বাঁচিয়ে রাখবে। এভাবেই জরুরি চিকিৎসা ছাড়া বেঁচে আছে বাচ্চা দুটো। ভারতবর্ষের ভগবান কতদিন এদের বাঁচাবে কে জানে! 

স্বামী মাইগ্রান্ট লেবার। লকডাউনে ফিরেছে খালি হাতে। তাই অন্য অভিশাপ জুলিয়ানার জীবনে নেমে এসেছে। হাঁড়িতে চাল আছে। রেশনে পাওয়া। আর লবন আছে। সব্জি বলতে এটাই। শুনেছে আলু পাবে। হাতে আসেনি। পেলে সেটা বাজারে বিক্রী করে মশলা কিনবে। ভরসার শাক মাঠে পড়ে। ইচ্ছে করে না জুলিয়ানার তুলে আনতে! শুধু ভাতও কদিন পাবে জানেনা। স্বামীর কাজ নেই। জুলিয়ানা নিজে পড়াশুনা করেনি। অভাবের সংসারে বিয়েটাই বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ছিল।সেটাই করে দিয়েছিল বাপ-মায়ে। ছেলেদের শিক্ষিত করার বড় স্বাদ! কিন্তু বাঁচাতে পারলে তো! কোবিড নিয়ে জুলিয়ানা কিছু জানেনা। কোভিডে মানুষ মরে! কিন্তু ওরা বেঁচেই বা কবে ছিল। অভাবেই জন্ম অভাবেই শেষ। মাঝে শুধু একটা বিয়ে ও দুইটি বাচ্চা। এইরকম একাধিক জুলিয়ানা ভুগছে প্রতিদিনের অসুখে। পরের প্রজন্মকেও দিয়ে যাচ্ছে দারিদ্রের উত্তরাধিকার! যুগ যুগ ধরে জুলিয়ানাদের ললাট লিখন কি বদলাবে? এদের কপালে লকডাউন লেখা আজীবন। খোলার সাধ্য  জুলিয়ানার বিশ্বাসের  কোন দেবতার! কে জানে!        

 নবগ্রাম,মুর্শিদাবাদ

   



No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...