ললিতার লকডাউনের দিন
লকডাউন মানুষকে হাতে হাত মিলিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছিল। কিন্তু এই সহমর্মিতার গল্পের পাশে কিছু কান্না লুকিয়ে ছিল। ললিতার মেয়ে টিউশনির পয়সা দিতে পারেনি। তাই লকডাউনে সেই পরিবারে বাসন মেজে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ললিতা মন্ডলকে।
অভাবের সংসার বরাবর ললিতার ছিল না। স্বামীর অসুস্থতায় পরিবারে নেমে আসে দূর্ভোগ। কাজ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে ললিতা। বাধ সাধে লকডাউন। দুই মাস পর আবার কাজে নামে ললিতা। অনেক কষ্টে মাসে মাত্র হাজার টাকা উপার্জন হয়। তাও নিশ্চিত নয় প্রতিমাসের জন্য। মাঝপথে কাজ ছাড়িয়ে দিলে টাকা মেলে না দিন হিসেবে। শ্রমের মর্যাদা নিয়ে গলা ফাটানো এই সমাজ কিন্তু এদের অধিকারটা বুঝিয়ে দিতে ও কড়ায় গন্ডায় মিটিতে দিতে অপরাগ। কোবিড বিপ্লবে মাস মাইনে না পেয়ে কেঁদে ফিরল রাস্তায় অগণিত মেইড সারভেন্ট।
বিশ্বজুড়ে একই চিত্র। ইথিওপিয়া থেকে কাজে যাওয়া ৩৭ জন মহিলা ডোমেস্টিক ওয়ার্কারকে লেবাননের রাজধানীতে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হল কিছুদিন আগেই। তাদের দেওয়া হল না কাজের পয়সা। ফিরিয়ে দেওয়া হল না তাদের পাসপোর্ট। এমন কি ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো হল দেশে ফেরার আবদারে। রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া মহিলার কথা জানাজানি হতেই লেবাননের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই মেইড দের ঘরে রাখার দায়িত্ব নিয়োগকারীদের। লেবাননে কাফালা নামের এক সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে এদের নিয়োগ করার ফলে ডোমেস্টিক ওয়ার্কারদের ভিসা নিয়োগকারীর সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই ওদের ঘরে ফেরাটা মালিকের মর্জির উপর নির্ভর করে। ওদিকে নিজের দেশ ইথিওপিয়াও এদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। এয়ার টিকিট শুধু ডলারে নেওয়া হয় ইথিওপিয়ায়। লেবাননে আর্থিক সংকটের কারনে ডলার আক্সেস করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই দেশের নিয়ম ও ব্যবস্থার ফাঁসে আটকে আছে এতজন ডোমেস্টিক স্টাফের ভাগ্য। দেশে ও দেশের বাইরে কাজের মেয়েরা এভাবেই গভীর সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। কাজ করেও অপমান ও অনিশ্চয়তার জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে ললিতারা।
মুকুন্দবাগ,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment