বালিকা কিস্কুর লকডাউনের দিন
জনগনের ভোটে ক্ষমতায় আসা নির্বাচিত সরকার কি সত্যি সত্যি নাগরিকের ভুখা পেটে ব্যথিত হয়? তবে বালিকা কিস্কুদের দেশ কোথায়? সারাবছর বালিকাদের খাবার জোটে না। অভাব যায় না। কেননা নির্দিষ্ট উপার্জন নেই। এদের মাথায় উপরে কেউ হাত রাখার নেই। এবারে এসেছে ভাইরাসের দাপট। নতুন পরিস্থতি। এখন প্রতিদিন সকাল হলেই ভয়। অভাব আর অবসাদ। বালিকা কিস্কুর জীবিকা বলতে সাঁওতালি নাচ প্রদর্শন। বছরের বাকি দিন বালিকা দিনমজুরি করে। মাঝে মাঝে জমিতে চাষের কাজে ডাক পায়। স্বামীও লেবার খাটে। তিন সন্তান ও শাশুড়ি নিয়ে এভাবেই চলে সংসার। শাশুড়ির ভাতাও বন্ধ । দুইবার পেয়েছে এক হাজার করে টাকা। বালিকা কিস্কুর বিদ্যালয়ের মুখ দেখা হয়নি। তবু নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বালিকা খুব সচেতন। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে এবার। মেয়ে একাদশ শ্রেণি। অভাবের সংসারে এক নতুন পরিস্থিতি লকডাউন। বালিকা কিস্কু খুব সহজেই বলছে, “ভাইরাসের লেগে খাওয়া বন্ধ। দিনে আটা গুলে খাচ্ছি। রাতে ভাত।”
প্রথমে আলু জুটলেও এখন ভরসা মাঠের মিশেলি শাক। ঠিক এই সময় ধান কাটা ও পাটের জন্য লেবার খাটে বালিকা ও তার স্বামী । লকডাউনের জন্য সেটাও বন্ধ। আখার খড়ি ফুরিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। কেরোসিন কেনার পয়সা নেই। রেশনে থেকে দুই কেজি চাল ও দুই কেজি আটা মিলেছে। তা দিয়ে ছয়জনের আর ক’দিন চলবে!
জনগণের শাসনে জনগণের চেয়ে অসহায় কেউ নেই। কার্লাইল গণতন্ত্রের সমালোচনা করে বলেছিলেন, “এটি হল মূর্খদের শাসন। অশিক্ষিত ও অজ্ঞদের পরিচালিত শাসন ভাল হতে পারে না।” নিজেদের মূর্খ স্বীকার করে নেওয়ার মানে হয় না। কিন্তু অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ছাড়া রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সত্যিই কি কোনও মানে হয়?এই বিতর্কটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব দরকার ।
No comments:
Post a Comment