Friday 6 November 2020

আদিবাসী নৃত্য শিল্পীদলের লকডাউনের দিন

আদিবাসী নৃত্য শিল্পী তপতী শকুন্তলার লকডাউন যাপন

আদিবাসী নৃত্য শিল্পী বালিকা কিস্কু,তপতী হেমব্রম,শকুন্তলা মুর্মুরা কেমন আছেন? আনলক ফেজ-৫ কি বদল করেছে দিনের  হাহাকার আর রাতের না খেয়ে শুয়ে পড়ার দিন! লকডাউন কী অভিশাপ নামিয়ে এনেছে এই মেয়েদের জীবনে!শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। শুধু নুন দিয়ে ভাত। রেশন থেকে পাওয়া চাল। সেটাই ভরসা ছিল। ছেলেদের অনলাইন ক্লাসের জন্য  মোবাইল ফোনের আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার গল্পবলা মায়ের চোখগুলো অন্তর বিদীর্ন করে। মনে হয় কিসের উন্নতি! কিসের গণতন্ত্র! আসলে কার জন্য এই দেশ? আদিবাসী লোকশিল্পের দলগুলির টানা বসে থাকা সাত মাস পেরিয়েছে। 'টিকমারা মারাং বুরু এনেচ সিরেঙজ গাঁওতা' ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৮ জন মহিলা নৃত্য শিল্পীদের আটজন- পূজা,অঞ্জলি,নেহা,প্রতিমারা ভাতা পায় না। কিন্তু  অনুষ্ঠানে গেছে লকডাউনের আগে। লকডাউনের প্রথম দিকে তো একবেলা খেয়ে কাটিয়েছে দিন। একঘরে প্রায় আটজন করে থাকা। 'বিষ্ণুপুর আদিবাসি লুতুতেরম গাঁওতা'র পাঁচজন নৃত্যশিল্পী শান্তি কিস্কু,রুসমি,নিশা,মামনি কিস্কুরা ভাতা ছাড়াই অনুষ্ঠান করে গেছে এতদিন। রেশনের পাওয়া চাল বেচে সংসার চালাচ্ছে!'শিয়ারা আদিবাসি হুডুর বিজলি গাঁওতা'র প্রতিষ্ঠা ২০০৭ সালে। আটজন মহিলা  নৃত্যশিল্পী শিবানী,চুমকি,মমতা,পরী,পামি মুর্মুদেরও বীনা ভাতায় চলেছে দিন। লকডাউন শুধু আধমরা করে দিয়েছে মমতা হেমব্রমদের।


কিন্তু এদের মুখের হাসি  অমলিন। নিজেদের দলের প্রোগ্রাম নিয়ে খুব উৎসাহ। অভিযোগ টাকা একসঙ্গে পায় না। সারাবছর পায় না

অন্যদিকে মাঠের কাজ মাত্র পনেরো থেকে কুড়িদিন। লকডাউনে সে আশাও ছেড়েছে। ধান কাটার সময় মাত্র ১০ দিন কাজ পাওয়ার আশা। সে টাকাও স্বামীরা মদের জন্য চুরি করে নেয়। বছরে ৩৬৫ দিন!  চলে কি করে? মেরিলা, রেখা এদের একটিই ইচ্ছা- পশুপালনের জন্য ব্যবস্থা করে দিলে সংসার বাঁচে। জীবন বাঁচে। হাস-মুরগি, ছাগল থাকলে অভাবের দিনে বিক্রী করে চলবে ঘর।

খুব সুন্দর করে সাজতে পারে প্রতিমা,অঞ্জলি,পানসুরি,শিবানীরা। দেখলে মনে হয় সৃষ্টি এর চেয়ে অপূর্ব আর কোথাও নেই! নৃত্যের কাজকে এরা দেবতার মত মানে। এরা সত্যিই বড় আর্টিস্ট। কিন্তু এদের স্বীকৃতি নেই! অভাব এদের ললাটলিখন। তাই মুখের হাসি দিয়ে জীবন জয়ের মন্ত্র আয়ত্ত করেছে আদিবাসী   নৃত্যশিল্পীরা। শুধু একটাই জিজ্ঞাসা আবার কবে প্রোগ্রাম হবে! আবার নতুন করে শিল্পীদল গড়া হবে! না খেয়ে ঘরে পড়ে থাকার  চেয়ে তো কাজ করে হাসিমুখে অভাবকে স্বীকার করে ছেলেমেয়েকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ভালো! এই মেয়ে ও মায়েদের  কাজ চাই! শুকুরমিনি,হুপনি,ফিলিচিতা মুর্মুদের কেউ আছে একটা কাজ দেওয়ার? এদের নৃত্যকে জনপ্রিয় করবে কেউ? দূর্গাপুজো,কালী পুজোর অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে এদের ডেকে এই আদিবাসী নৃত্যশিল্পীদের শিল্পের কদর করবে  কি কেউ? আজ নয়ত আর কবে?

বিষ্ণুপুর,নবগ্রাম।

 

No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...