Saturday, 4 April 2020

কৃষক মৌসুমি বিশ্বাসের লকডাউন দিনলিপি

মৌসুমির নিজের হাতের চাষের কলা যাচ্ছে গরুর পেটে। কৃষি বিশ্ব অর্থনীতির ষাট শতাংশ চাষির একজন এই মৌসুমি। লকডাউনে নষ্ট হচ্ছে বিক্রী না হওয়া কলা। ফলের দোকান খুললেও খোলেনি ফলের আড়ত। নষ্ট হচ্ছে পান। পয়সা নেই। পারছে না লেবার খাটাতে মাঠে। লোনের ছয় হাজার টাকা শোধের খাড়া ঝুলছে মাথায়। তবু প্রতিদিন কোদাল আর ঝুড়ি হাতে মাঠে যাওয়ার পুরানো অভ্যাস। মন মানে না। পাঁচ রকম শষ্যের চাষ বছরে। জৈব সারের ব্যবহারও নিজের হাতেই করছে। তাই এখন বীজ,সারের সমস্যা না থাকলেও হাতটান। লোন শোধ করলে পাবে নতুন লোন। মুশকিল এই যে, লোন শোধের ব্যাপারেও অন্ধকারে মৌসুমি। পরে সুযোগ পেলেও তো টাকা চাই হাতে। যা ফলছে তা যে বাজারজাত হচ্ছে না! তবে তো আগামীতে বিপদ ঘনিয়ে আসছে! জেলার মহিলা চাষিদের জন্যও মৌসুমী চিন্তিত। ফসল ফলিয়ে নিজেই মাথায় করে বয়ে বাজারে নিয়ে যায় মৌসুমি। এতে কিছু খরচও বাঁচে। মৌসুমি বিশ্বাসের লকডাউন এমন উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে কাটছে। গ্রাম সুনসান। কি যেন হয়ে গেছে দেশে। রোগ আসেনি। কিন্তু ঘরে চাল কমছে প্রতিদিন। ফুরিয়ে গেলে কি হবে কে জানে! বাজার না চালু হলে ঘরে নষ্ট ,আবার খুললে বাজারের পথে সংক্রমণের ভয়। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। ঘরে সার দেওয়া মেডেলের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় মৌসুমি । দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, "কৃষক রত্ন বলতে লজ্জা লাগে। প্রতিবছর কুড়ি হাজার টাকা লোন না নিলে পারিনা চাষ করতে। ঘরে গরু ,ছাগল,মুরগি আছে তাই বেঁচে আছি প্রাণে।" এ দেশে কৃষকদের জন্য খামারের বাইরে বিকল্প কর্মসংস্থানের চল নেই। মৌসুমি নিজেই টিউশনি শুরু করে দিয়েছে। যে পয়সা পায় তা চাষের কাজে লাগায়।
নেই মরোক্কো ও রুয়ান্ডার মত ব্যাপক ক্রপ ইন্টেন্সিফিকেশন প্রোগ্রাম। পিছিয়ে নেই মৌসুমি। নিজেই মাটি পরীক্ষা ও জৈব সারের তৈরি করে প্রয়োগ করেছে। নিজের পদ্ধতি লাগিয়ে চাষ করেছে পেয়াজ,রসুন,কালোজিরে,আদা,হলুদ।




এলাকায় বড্ড আদর মৌসুমির। শিক্ষিত চাষি মৌসুমির বাড়ি চিনতে কারও অসুবিধে হয় না। গ্রামের মাথায় এসে একবার নাম নিলেই সোজা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখে আসে গ্রামের লোক। সাধনার জীবন মৌসুমির। জীবনে সংসার পাতার সময় হয়নি। এম এ পড়তে পড়তেই বাবার মৃত্যুতে পড়া ছেড়ে হাল ধরে সংসারের। মাত্র দুকাঠা জমি নিয়ে লড়াই শুরু। নিজের হাতেই কোদাল তুলে নেয়। প্রথম দিন চোখের জলে মাটি ভিজে যায়। হাতের অসহ্য যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়ে। কিন্তু পরিবারের আর সহায় সম্বল কিছু না থাকায় এভাবেই শুরু মৌসুমির চাষের জীবন। নিজের লেখাপড়া কাজে লাগিয়ে চাষে উন্নতি নিয়ে আসে। আজও বাজারে মৌসুমির কলা সেরা কাঁদি প্রতি ২৫০-৩০০টি। মাছ চাষেও তাক লাগিয়ে দেয় সকলকে। এখন জেলার নানা প্রান্তে চাষের পরামর্শ দেয় মুর্শিদাবাদের মৌসুমি। মাঠে প্রাণ আছে বিশ্বাস মৌসুমির। মাঠের নিজেস্ব ভাষাও আছে মনে করে মৌসুমি। তাই সংসারের আর এক নাম মাঠ মৌসুমির কাছে। এখানে কাজ।এখানেই কান্না-হাসি। এখান থেকেই উৎসবের জামা। মাহামারি জয়ের মন্ত্র।
ছয়ঘড়ি,মুর্শিদাবাদ

2 comments:

  1. সবার একই অবস্থা , তবে ভালো লাগলো দিদিভাইয়ের চাষের অভিজ্ঞতা দেখে
    দিদি কোন জেলার ?

    ReplyDelete

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...