বিড়ি শ্রমিক তসলেমার দিনযাপণ
একটি পরিবারের কোনও জীবিকা নেই। কিন্তু তারা বেঁচে আছে। পরিবারের বাচ্চা দুটোও হাড় জিরজিরে অবস্থায় শ্বাস নিচ্ছে। ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। গল্প, উপন্যাস ও সিনেমা কিছুর সঙ্গে মেলানো যায় না মুখোমুখি পাওয়া এমন মানুষদের। দেখামাত্রই ছন্দপতন ঘটে নিমেষে। এমনই একজন তসলেমা। বিড়ি বেঁধে জীবনধারণ বছর বত্রিশের মহিলার। স্বামী অসুস্থ। দুই ছেলে। দেড়শো টাকা হাজারে দিনে পাঁচশোর বেশি বিড়ি বাঁধতে পারে না তসলেমা। শরীরে কুলায় না। বিয়ের আগে থেকেই বিড়ি বাঁধা শুরু। ছোটবেলায় মা মারা গেছে। নানির বাড়িতে মানুষ। খালার চেষ্টায় হয় বিয়ে। বিদ্যালয়ের মুখ দেখেনি কখনও। বিয়েই ছিল থাকা খাওয়ার সংস্থান। কিন্তু বাদ সাধল কপাল। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ল। অভাবে শুরু হল আবার বিড়ি বাঁধা। এভাবেই কোনওরকমে চলতে থাকল সংসার। বিড়ি বাঁধা বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে তা কখনও কল্পনাও করেনি তসলেমা। অভাবের সময় গ্রামে গ্রামে চাইতে বেরোতে হয় তসলেমাকে। কখনও মেলে। আবার কখনও খালি হাতে ফিরতে হয়।
খাবার জোগাড় করতে পারলে খাওয়া হয় নইলে খাওয়া হয় না। সারাবছর একই রকম। দিন বদলায় না। সরকারি সুবিধা তেমন জানা নেই। সন্ধান করে দেওয়ার মানুষও নেই। অভাবের দিন তাই প্রতিদিন। লডাউনের জন্য এখন বিড়ি বাঁধা বন্ধ। যদিও এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। নোটবন্দির সময় এমনটা হয়েছিল। বিড়ি জমা ও পাতা দেওয়া বন্ধ ছিল অনেকদিন। সমস্যা এই যে তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চাইতে বেরোনোর বাধা ছিল না। এখন মুশকিল গ্রামের সীমানা পেরিয়ে অন্যত্র যাওয়া। তাই ছেলেকে দিয়ে কলা বা ছুটির পাতা বা কচুর শাক বা কুমড়োর পাতা বা আমড়া পেড়ে এনে তাই ভাতের সঙ্গে সেদ্ধ করে খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
তসলেমা দুই সন্তান নিয়ে জেরবার। ছেলেদের খাবার বাঁচানোর জন্য নিজে একবেলা খাচ্ছে। রাতে মাঝে মাঝে খাচ্ছেও না। রান্না আখাতেই। কিন্তু ক’দিন দুই বেলা চলবে জানে না তসলেমা। প্রতিদিন লকড়ি জোগাড় করে এনে দেয় বারো বছরের ছেলে। সময় পেলে নিজেও ঘুরে ঘুরে জোগাড় করে শুকনো পাতা ও কাঠ-কুঠালি। পরিবারকে খাওয়াতে একটুও ক্লান্তি নেই তসলেমার। নেই চেষ্টার ত্রুটি। গ্রামের অবস্থাপন্নদের বাড়িতে কাজ করে দিয়েও খাবার জোগাড় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন তো আর এভাবে চারজনের খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। বিড়ি বাঁধার পয়সা হাতে থাকলে স্বামীর ওষুধটা কেনা হয়। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন ধরে। গ্রামে চাল-আলু বিলি হয়েছে। তসলেমা বলে, “এগুলো তো রান্না করতে হবে। কি দিয়ে করব? একটা ষ্টোভ আছে পুরানো। কেরোসিনের অভাবে পড়ে আছে। লকড়িতে ভাত ফুটনোই কঠিন। আলু রান্না করার তেল- মশলা নেই। চাল-আলু রান্নার ব্যবস্থা করার সাধ্য কি আমার আছে! তাও দুই কেজি চালে চারজনের ক’দিন যাবে? শুধু ভাতটাই তো জোটে না প্রতিদিন।”
এভাবেই লকডাউন ধীরে ধীরে তসলেমাদের পরিবারে মরণ -বাঁচন সংগ্রাম এনে দিচ্ছে। এমনিতেই প্রতিদিন দুবেলা খাবার জোগাড়ের চ্যালেঞ্জ ছিল এতদিন। এখন তো টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা। পরিবারের অসুস্থতা ও দৈনন্দিন চাহিদা নিয়ে অকুল পাথারে পথ হারাচ্ছে তসলেমারা।
খাবার জোগাড় করতে পারলে খাওয়া হয় নইলে খাওয়া হয় না। সারাবছর একই রকম। দিন বদলায় না। সরকারি সুবিধা তেমন জানা নেই। সন্ধান করে দেওয়ার মানুষও নেই। অভাবের দিন তাই প্রতিদিন। লডাউনের জন্য এখন বিড়ি বাঁধা বন্ধ। যদিও এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। নোটবন্দির সময় এমনটা হয়েছিল। বিড়ি জমা ও পাতা দেওয়া বন্ধ ছিল অনেকদিন। সমস্যা এই যে তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চাইতে বেরোনোর বাধা ছিল না। এখন মুশকিল গ্রামের সীমানা পেরিয়ে অন্যত্র যাওয়া। তাই ছেলেকে দিয়ে কলা বা ছুটির পাতা বা কচুর শাক বা কুমড়োর পাতা বা আমড়া পেড়ে এনে তাই ভাতের সঙ্গে সেদ্ধ করে খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
তসলেমা দুই সন্তান নিয়ে জেরবার। ছেলেদের খাবার বাঁচানোর জন্য নিজে একবেলা খাচ্ছে। রাতে মাঝে মাঝে খাচ্ছেও না। রান্না আখাতেই। কিন্তু ক’দিন দুই বেলা চলবে জানে না তসলেমা। প্রতিদিন লকড়ি জোগাড় করে এনে দেয় বারো বছরের ছেলে। সময় পেলে নিজেও ঘুরে ঘুরে জোগাড় করে শুকনো পাতা ও কাঠ-কুঠালি। পরিবারকে খাওয়াতে একটুও ক্লান্তি নেই তসলেমার। নেই চেষ্টার ত্রুটি। গ্রামের অবস্থাপন্নদের বাড়িতে কাজ করে দিয়েও খাবার জোগাড় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন তো আর এভাবে চারজনের খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। বিড়ি বাঁধার পয়সা হাতে থাকলে স্বামীর ওষুধটা কেনা হয়। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন ধরে। গ্রামে চাল-আলু বিলি হয়েছে। তসলেমা বলে, “এগুলো তো রান্না করতে হবে। কি দিয়ে করব? একটা ষ্টোভ আছে পুরানো। কেরোসিনের অভাবে পড়ে আছে। লকড়িতে ভাত ফুটনোই কঠিন। আলু রান্না করার তেল- মশলা নেই। চাল-আলু রান্নার ব্যবস্থা করার সাধ্য কি আমার আছে! তাও দুই কেজি চালে চারজনের ক’দিন যাবে? শুধু ভাতটাই তো জোটে না প্রতিদিন।”
এভাবেই লকডাউন ধীরে ধীরে তসলেমাদের পরিবারে মরণ -বাঁচন সংগ্রাম এনে দিচ্ছে। এমনিতেই প্রতিদিন দুবেলা খাবার জোগাড়ের চ্যালেঞ্জ ছিল এতদিন। এখন তো টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা। পরিবারের অসুস্থতা ও দৈনন্দিন চাহিদা নিয়ে অকুল পাথারে পথ হারাচ্ছে তসলেমারা।
No comments:
Post a Comment