আঞ্জিরার সংকটকাল
তখন ষষ্ঠ শ্রেণি। আঞ্জিরা মাকে হারাল। সপ্তম শ্রেণিতেই বিয়ে দেওয়া হল আঞ্জিরা। ক্লাসের ফার্ষ্ট গার্ল চোখের জল মুছে গৃহিনী হয়ে গেল। স্বামী কৃষক। শ্বশুর বাড়িকে জীবনের ঠিকানা স্বীকার করে নিল আঞ্জিরা। কিছুদিন যেতেই সংসারে হাঁপিয়ে উঠল। ঘরের বাঁধন,সন্তানের মায়া কিছুই বাঁধতে পারল না আঞ্জিরা। শাশুমা বৌমার মন বুঝে গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করলেন। টেলারিং এর কাজ শিখে ও কাজ করতে শুরু করল আঞ্জিরা। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারল না। টানতে থাকল বিদ্যালয়ের চত্বর। ছেলের মা গ্রামের বিদ্যালয়ে কি করে পড়বে? লোকে কি বলবে! অবশেষে শাশুমাকে রাজি করে মুক্ত বিদ্যালয়ে শুরু করে দিল পড়াশুনা। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে টিউশন নিল। নিজের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকল ছেলের পড়াশুনা। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই মারা গেল বাবা। শেষবারের মত চোখের দেখাটাও হল না। বিয়ের ১৭ বছর পর পাশ করল মাধ্যমিক আঞ্জিরা। তার ঠিক তিন বছর পর উচ্চমাধ্যমিক। সেই পরীক্ষা ছেলে পাশ করল মায়ের পাশের দুই বছর পর। টেলারিং এর কাজের পরিধি বাড়াতে শহরে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করল আঞ্জিরা। বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে দিনপিছু কাজ মিলতে থাকল। টাকাও আসতে থাকল। পেট চালাতে জ্যাম-জেলিও বিক্রী করতে থাকল আঞ্জিরা। শুরু করে দিল জরি-চুমকি কাঁথা ষ্টিচ ও এমব্রডারির কাজ শেখা। তারপর হাজার টাকায় ভাড়া নিল টেলারিং চালানোর জন্য একটি ঘর। ছেলে ইতিমধ্যে ভূগোলে অনার্স পড়ে এম এস সি পড়া শেষ করল। চাকরির পরীক্ষার জন্য কোচিং নিতে শুরু করল ছেলেও। এবারে বসল বিসিএস পরীক্ষায়। জীবন এগিয়ে যেতে থাকল ।
তখন ষষ্ঠ শ্রেণি। আঞ্জিরা মাকে হারাল। সপ্তম শ্রেণিতেই বিয়ে দেওয়া হল আঞ্জিরা। ক্লাসের ফার্ষ্ট গার্ল চোখের জল মুছে গৃহিনী হয়ে গেল। স্বামী কৃষক। শ্বশুর বাড়িকে জীবনের ঠিকানা স্বীকার করে নিল আঞ্জিরা। কিছুদিন যেতেই সংসারে হাঁপিয়ে উঠল। ঘরের বাঁধন,সন্তানের মায়া কিছুই বাঁধতে পারল না আঞ্জিরা। শাশুমা বৌমার মন বুঝে গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করলেন। টেলারিং এর কাজ শিখে ও কাজ করতে শুরু করল আঞ্জিরা। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারল না। টানতে থাকল বিদ্যালয়ের চত্বর। ছেলের মা গ্রামের বিদ্যালয়ে কি করে পড়বে? লোকে কি বলবে! অবশেষে শাশুমাকে রাজি করে মুক্ত বিদ্যালয়ে শুরু করে দিল পড়াশুনা। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে টিউশন নিল। নিজের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকল ছেলের পড়াশুনা। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই মারা গেল বাবা। শেষবারের মত চোখের দেখাটাও হল না। বিয়ের ১৭ বছর পর পাশ করল মাধ্যমিক আঞ্জিরা। তার ঠিক তিন বছর পর উচ্চমাধ্যমিক। সেই পরীক্ষা ছেলে পাশ করল মায়ের পাশের দুই বছর পর। টেলারিং এর কাজের পরিধি বাড়াতে শহরে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করল আঞ্জিরা। বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে দিনপিছু কাজ মিলতে থাকল। টাকাও আসতে থাকল। পেট চালাতে জ্যাম-জেলিও বিক্রী করতে থাকল আঞ্জিরা। শুরু করে দিল জরি-চুমকি কাঁথা ষ্টিচ ও এমব্রডারির কাজ শেখা। তারপর হাজার টাকায় ভাড়া নিল টেলারিং চালানোর জন্য একটি ঘর। ছেলে ইতিমধ্যে ভূগোলে অনার্স পড়ে এম এস সি পড়া শেষ করল। চাকরির পরীক্ষার জন্য কোচিং নিতে শুরু করল ছেলেও। এবারে বসল বিসিএস পরীক্ষায়। জীবন এগিয়ে যেতে থাকল ।
হঠাৎ পথের কাঁটা হল লকডাউন। জীবন সংসার সব নিমেষে থমকে গেল। গ্রাম থেকে তিন কিমি দূরে দোকান। যাওয়ার উপায় নেই। অর্ডার সব পড়ে। টাকা নেই। রাতে ঘুম নেই। সম্বল বলতে ভিটে। সেটা মর্টগেজ দিয়ে টাকা সংগ্রহ কী করে হবে তা নিয়ে পরিবারের সকলের মাথায় হাত। এক বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত টেলারিং-এর পরীক্ষায় প্রথম হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় টেলারিং সম্পর্কিত কাজে সুপারভাইজিংয়ের সুযোগ আসে আঞ্জিরার। সেটাও লকডাউনের জন্য আপাতত বন্ধ।
মুর্শিদাবাদে বাল্যবিবাহ এখনও বন্ধ করা যায়নি। বিয়ের পর মুখ বুজে সংসার ছিল একমাত্র রেওয়াজ। নিরুপায় হয়ে সেই দলিলে নাম লিখিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভাগ্য নিজের হাতেই লিখতে শুরু করেছিল আঞ্জিরা। কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে যাওয়ার কারণে প্রথমেই ‘খারাপ মেয়ে’ বলে দাগিয়ে থামানো যায়নি একসময়ের বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীকে। সব অমর্যাদা উপেক্ষা করে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় আঞ্জিরা। ছেলেকে নিজের পরিবারের ঢাল হিসেবে তৈরি করে। কষ্টার্জিত এই সংগ্রামে এমন ঝোড়ো হাওয়ার মতো লকডাউন নেমে আসবে কল্পনাতেও ভাবেনি। ভেঙে পড়েছে মন। একের পর এক দিন বিভীষিকার মত কাটছে। প্রায় প্রতিদিনই শহর থেকে টেলারিংয়ের সরঞ্জাম আনতে হয়। নইলে কাজ নির্দিষ্ট দিনে ডেলিভারি দেওয়া যায় না। নতুন করে অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনাও কমছে । অন্যদিকে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অনিয়মিত উপার্জনটাও বন্ধ। নিজের ব্যবসাকে বহু কষ্টে সামলেছিল। এখন রাতবিরেতে উঠে ভিটের জমির কাগজ খুঁজছে। সামান্য জমিটুকু চলে গেলে তো পথে বসতে হবে। চিন্তার ঘোর কাটতেই সকাল হয়ে যাচ্ছে। একটিই চিন্তা। এই লকডাউনের পর আবার কি লকডাউন চলবে? তাহলে কী হবে?
অসাধারন লেখনী । মন ছুঁয়ে গেল ...
ReplyDeleteআঞ্জিরাদি যেহেতু টেলারিং জানেন এই সময় উনি মাস্ক তৈরি করতে পারেন।
উনাকে একজন সার্জিক্যাল মাস্ক শেখাবেন দায়িত্ব নিয়েছেন। দেখি কতটা এগনো যায়।
ReplyDelete