Sunday, 12 April 2020

হস্তশিল্পী রীনার লকডাউনের দিন

 কাঁচের কারিগর রীনা

পঁচিশ বছর ধরে চলছে পরিবারের কাঁচের শো-পিস তৈরির কাজ। স্বামীর ডাক পড়েছিল আগ্রায় গিয়ে  নতুন ডিজাইন শেখার। তাই  বিয়ের পরই পাড়ি দেয় রীনা চৌধুরী। ঘর সংসার সামলে সময় নষ্ট করেনি রীনা। স্বামীর কাছে বসেই তালিম নেয় কাজের। স্বামীর মৃত্যুর পর সাময়িক ভেঙে পড়ে রীনা।  তবুও দমে না গিয়ে শুরু করে কাজ। ধীরে ধীরে নিজের তিন ছেলে মেয়েকে কাজের সঙ্গে যুক্ত করে। ঝাউ গাছ, পাখি ,নানা দেব-দেবীর মূর্তি, নৌকা, গরুর গাড়ি এমন সব শো-পিস তৈরি করে নিজের হাতে কাঁচ দিয়ে। 

খুচরো,পাইকারি বিক্রি ও নানা মেলায় জিনিষ পৌঁছে দেয় রীনার একুশ বছরের ছেলে। ষাট টাকা থেকে আড়াইশো টাকা পর্যন্ত শো-পিস প্রতি দাম পেয়ে থাকে রীনা। মা-ছেলে বাজার ধরে নিয়েছিল একেবারে নিপুণ হাতে। তখনই বাদ সাধল লকডাউন। ঘরে অর্ডারের জিনিষ তৈরি। নেওয়ার লোক এল না। অন্যদিকে নতুন কাজও বন্ধ।



ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে এখনো কাঁচের শো-পিসে চাহিদা অনেকটাই কম। কিন্তু তা রীনাদের উপর প্রভাব ফেলেনি তেমন। চাহিদা ও বাজারের সঙ্গে  তাল মিলিয়ে ভালোই এগিয়েছে রীনারা।  রিসেপসন, পুরস্কার ও উপহারের জন্য রীনার বাড়ি বয়ে আসে নিয়মিত ক্রেতা। অর্ডার মেলে প্রতিদিন। পুজোর সময় বেশি। কাজ শেষ করতে পরিবারের সকলকে দিন রাত এক করতে হয়। একমাত্র দুশ্চিন্তা এখন কবে অক্সিজেন ও গ্যাস সিলিন্ডার মিলবে। অক্সিজেনের অভাবে পড়ে আছে হাতের কাজ। কাঁচ  না গলাতে পারলে কাজই শুরু করা যাবে না। একমাসে প্রায় আশি হাজার টাকার ক্ষতি। সরকারি সাহায্য না পেলে টাকা শোধ তো দূরের কথা দিন চালানো কঠিন হবে। ভবিষ্যতের অনিশ্চতায় অন্যমনস্ক রীনা জানায়, যা আয় হয় তা দিয়ে ঘর বাড়ির মেরামত ও খরচ করে সংসার চলে যায়  আমাদের। বাকি টাকা দিয়ে লোন মেটাতে থাকি প্রতিমাসে। ইনকাম বন্ধ হলে তো অভাবে  মারা পড়ার কথা।” লোনের টাকা তিন মাস দিতে হবে না সে নিয়ে খুব বেশি খুশি নয় রীনা। হাত তো শূন্য হয়ে পড়বে তার আগেই। সাহায্য বলতে এখন পর্যন্ত রেশন থেকে দুই কেজি চাল জুটেছে।

এত বছর ধরে জুড়ে থাকা এই কাজ এভাবে থেমে গেলে কী করে সামাল দেওয়া যাবে জানে না রীনারা। হতাশ রীনা বলে,”অক্সিজেনটাও যদি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিত কেউ কাজটা তো চালিয়ে যেতে পারতাম!” সারা পৃথিবী তো আসলে এই অক্সিজেনের খোঁজে এখন মরিয়া। রীনাদের এই অভাবনীয় সঙ্কটের সঙ্গে জুড়েছে নতুন বিপদ। সেটা ভাঙনের। জীবন বাঁচলেও এই ধেয়ে আসা দু-পাড় ভাঙা বিপদে বাঁধ দেওয়ার কোনও আগাম সতর্কতা  হাতের কাছে নেই রীনাদের।









No comments:

Post a Comment

কাথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউনের দিন

  কাঁথাষ্টিচ শিল্পী সোনালির লকডাউন যাপন    মেয়েদের সুন্দর মুখের নয়, সুন্দর কাজের জয়  সর্বত্র। সাফল্যের সীমানা দিগন্তপার। তাইতো সোনালীদের এত ...