রেশম চাষি লায়লা
উনিশ বছর ধরে রেশম চাষ লয়লার। লকডাউন এখন হাতের রেখায় ঘর বেঁধেছে। উঠোনে বসে সারাদিন অনিশ্চয়তা আর বিরামহীন প্রহর গুনতি। লকডাউনের কানাঘুষো শুনতেই জলের দরে বিক্রী করতে হল রেশম গুটি। শোবার একটিই ঘর। তাই অগত্যা হার মানতে হল। সময় নিয়ে পরে শুকিয়ে বিক্রী করার বিকল্প কিছু হাতে থাকল না। অন্য সময় সাড়ে তিনশো চারশো টাকা কেজি দরে বিক্রী করে রেশম গুটি। এবার হাফ দামও পেল না। উত্তরবঙ্গ থেকে লোক আসার কথা ছিল। গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ। তাই স্থানীয় মহাজনদের কাছেই রেশমগুটি বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছে লায়লা। শ্বশুরবাড়ি এসে পড়েই রেশমপোকা বা পলু নিয়ে কাজ শেখা শুরু। ফিরে তাকানো আর হয়নি। টানা চলছে কাজ।
অষ্টম শ্রেনিতেই বিয়ে লয়লার। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ নেই। তবু মনোবল ঢের লায়লার। বেকার ও অসুস্থ স্বামী। দুই মেয়েকে কলেজ পড়ানোর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে লড়াই। প্রতিদিন ভোরে উঠে পলু বা রেশম পোকার দেখভাল করা। একা সংসার সামলানো। মাঝে মাঝে কৃষিমেলায় যাওয়া। আবার সদর শহরে ছোটাছুটি করা।রেশমপোকা জাত রেশমগুটি বিক্রী করে যা হয় তা দিয়ে পরের চাষের প্রস্তুতি চলে। তিনশো গুটিপোকার ডিমের বরাত জোটে লায়লার। সংসারের টানে যদি কখনও রাশ টানতে হয় তবু ইচ্ছা অন্তত পঞ্চাশ গুটিপোকার ডিমের রেশমপোকার চাষ চালিয়ে যাবে। এই পঞ্চাশ দিয়েই শুরু করেছিল প্রথম রেশম পোকা পালনের দিনগুলো। তাই থেমে থাকার উপায় নেই। একটাই ঘরের জন্য বেশি ডিম নিয়ে কাজ চালানোর উপায় নেই। তাই তিনশো গুটিপোকার ডিমেই থামিয়ে রেখেছে নিজেকে।
অষ্টম শ্রেনিতেই বিয়ে লয়লার। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ নেই। তবু মনোবল ঢের লায়লার। বেকার ও অসুস্থ স্বামী। দুই মেয়েকে কলেজ পড়ানোর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে লড়াই। প্রতিদিন ভোরে উঠে পলু বা রেশম পোকার দেখভাল করা। একা সংসার সামলানো। মাঝে মাঝে কৃষিমেলায় যাওয়া। আবার সদর শহরে ছোটাছুটি করা।রেশমপোকা জাত রেশমগুটি বিক্রী করে যা হয় তা দিয়ে পরের চাষের প্রস্তুতি চলে। তিনশো গুটিপোকার ডিমের বরাত জোটে লায়লার। সংসারের টানে যদি কখনও রাশ টানতে হয় তবু ইচ্ছা অন্তত পঞ্চাশ গুটিপোকার ডিমের রেশমপোকার চাষ চালিয়ে যাবে। এই পঞ্চাশ দিয়েই শুরু করেছিল প্রথম রেশম পোকা পালনের দিনগুলো। তাই থেমে থাকার উপায় নেই। একটাই ঘরের জন্য বেশি ডিম নিয়ে কাজ চালানোর উপায় নেই। তাই তিনশো গুটিপোকার ডিমেই থামিয়ে রেখেছে নিজেকে।
ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ধরতে হয়েছে টেলারিং এর কাজ। কিছু টাকা হাতে এসে পড়লে চাষের কাজে লাগে। এভাবেই চলা। তবু তুঁতের জমিতে এবারও জল দিতে পারল না লয়লা। লকডাউনের জন্য রেশম গুটির উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় জমির জলটুকু দেওয়ার সামর্থ্য হল না।
বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সিল্ক। এর এর উৎপাদনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে জড়িয়ে আছেন লায়লার মত অনেক মহিলা। ওরা হয়ত জানে না যে, তার দেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেশম উৎপাদনকারী দেশ। এও জানেনা মোট উৎপাদনের ৯৭ শতাংশ তুঁত সরবরাহকারী পাঁচটি রাজ্যের একটিতে তার নিজের বাস। শুধু জানে গুটিপোকার ডিমকে ভালো করে খাবার দেওয়া। রোগ থেকে বাঁচিয়ে লালন করা। উপযুক্ত দামে বিক্রী করে সারাবছরের হাড়ভাঙা খাটুনির পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা। তারপর গুটিপোকার ডিম ঘরে আনার আগে ঘর শোধন করে রাখা।
সাগরপাড়ায় ঘরে ঘরে মহিলারা রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত। তাদের জন্য আলাদা কি ব্যবস্থা হল লকডাউনে জানে না লায়লারা। পরবর্তী চাষ এপ্রিলের গরমের সময়। কি করে শুরু হবে তা কেউ নিশ্চিত নয়। এমনিতেই এইসময় বেশ কঠিন পলু পালনের জন্য। পলু খাওয়ানোর জন্য পাতা গরমে শুকিয়ে যায়। ভোর শেষ হতেই কাজ শেষ করার চাপ বাড়তে থাকে। এদিকে সংসার ও মেয়েদের কলেজের জন্য আত্মীয়দের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। চারজনের প্রতিদিনের খাবার জোটানো বিরাট চ্যালেঞ্জ। আজকের বাতি নেভানো নিয়ে লয়লার আক্ষেপ, "আমাদের ঘরে আলো জ্বলে বটে কিন্তু আঁধার ঘোচে না। বড়লোকদের আলো নেভানো হয়ত মর্জি। আমাদের কারেন্টের বিলের ভয়ে বাতি নেভানো চলে বছরভর।"
আসলে পাওয়ারলুমের জন্য হ্যান্ডলুমের শিল্পীদের অবস্থা ছিল সংকটে।এই লকডাউনে আরো বেহাল অবস্থা।
ReplyDelete@Jinat আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ গ্রামবাংলার কিছু জীবন কথা নিপুণভাবে তুলে ধরার জন্য।
Thanks a lot ...
Delete