সেনাপতি হেমব্রমের লকডাউন যাপন
বাড়ির চালের উপর হাঁড়ি তোলা কেন? সিনাপতি একগাল হেসে বলে, “আজ চাল নাই ,রান্না হবে না! মা কালই হাঁড়ি ধুয়ে বলেছে চাল শেষ।” সিনাপতির মা মাথা নিচু করে বলে, “না, চাল হাঁড়িতে একটু আছে, রোগ এসেছে তো, সবারই অভাব চলছে। বেলা শেষ হতে হতেই জোগাড় হয়ে যাবে কিছু।” সিনাপতি বলে, কাল রাতে শুধু শাক সেদ্ধ দিয়েছে নুন দিয়ে। সিনাপতির মা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে, হাঁসের ডিম দিয়ে ভাত খাবে বায়না করছে। এখন কি আর জোগাড় করা যায়!” খাবারের টান। একথা বাইরে বলতে সিনাপতির মা যে অস্বস্তি বোধ করছে তা স্পষ্ট। দারিদ্রেরও একটা অহংকার আছে হয়তো। সরকারের দানের ফিরিস্তির বিজ্ঞাপন এদের কাছে নেই। সারাবছর প্রতিদিন খেতে না পাওয়াটাই এদের কপাল বলে স্বীকার করে নিয়েছে হেমব্রম পরিবার।
বাইশ বছরের সিনাপতি কখনও স্কুলে যায়নি। শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় বাড়ির বাইরে তেমন যাওয়া হয়ে ওঠে না। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যায়। সেনাপতি লকডাউনে কী করছে? জানতে চাইলে বলে, “বনধের সময় বসে আছি। আমার এমনিতে কোথাও যাওয়া হয়না এখন সকলেই যেতে পারছে না। আমার কষ্টটা ভালো করে সবাই বুঝছে।” সিনাপতির মা আঁচলে চোখ মুছে বলে, “গরিব মানুষ আমরা। গেল মাসে চাষের মাঠে একবার কাজ পেয়েছিলাম। এখন তো কাজের কোনও আশা নেই। মেয়েটার লেখা-পড়া হয়নি। আবার বিয়েও হবে না। পেটে না খেলে তো লোক জানতে পারে না! বিয়ে দিতে না পারলে তো বিপদে পড়ে যাব।” চাল বা আলু কি পেয়েছেন? জিজ্ঞাসা করতেই সিনাপতির মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, “কত লোক এল। লিস্ট করে নিয়ে গেল। বলল চাল-ডাল দেবে। কেউ আসেনি। কেউ কিছু দিল না। আমাদের কেউ মানুষ ভাবে না।” যাক সরকারের উপর কারও তো একবুক দুঃখ আছে যা এখনও গরিবের চোখে জল ভরে দেয়!
ফোটো নিতে চাইলে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে সিনাপতি। বলে, “আমি ভালো করে দাঁড়িয়ে মায়ের পাশে হাসি দেব তখন তুলবেন।” কাজ শেষে কিছুদূর এগিয়ে পেছন ফিরতেই দেখি সিনাপতি ইশারা করছে। কাছে যেতেই কানে কানে বলল, “আমায় খাবার পাঠাবেন বনধ পর্যন্ত? মা খুব রাগ করে ভাত চাইলে। বলে, ”বসে বসে আর কত গিলবি? বাড়ির আর সবারও পেট আছে!” আর আমার পা-টা ঠিক হলে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। মা খুব কাঁদে আমার বিয়ে হবে না বলে। আপনি যদি সরকারকে বলে আমার পা-টা ঠিক করে দিতে পারেন ভালো হয়।” সিনাপতির বাড়ি পেরিয়ে দ্রুত চার মাথার মোড়ের রাস্তায় এসে ভাবলাম কোন রাস্তা ঠিক সরকারের কাছে পৌঁছয় জানলে এখনই হাঁটা শুরু করতাম। সিনাপতির সোজা করে পা ফেলা খুব জরুরি। ওর বিশ্বাস ফেরানোটাও জরুরি। ওদের পরিবারের কাছে অসহায়ের আর্তি শুনতে আসা সব লোক সরকারের। আর সরকার মানেই এদের কাছে মিথ্যাবাদী ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।
খুব সুন্দর লাগল
ReplyDeletethank u
Deleteআমার কাজের সূত্রে এই চত্বরটা আমার পরিচিত। সারা বছরই নিদারুণ দুঃখ কষ্টে থাকে মানুষজন, তার মধ্যে এখন লকডাউন। মানুষের জোট চাই, কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কেবল এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব।
ReplyDeleteসেটা ছাড়া উপায় নেই।
Deleteপ্লিজ adress টা একটু দিন :
ReplyDeleteগ্রাম, পোস্ট , ব্লক, district
নগরা গ্রাম। নবগ্রাম ব্লক। মুর্শিদাবাদ।
ReplyDelete