সন্ধ্যা সাপুরিয়ার লকডাউন যাপন
সরকারের ঘর থেকে পাওয়া রেশনের চাল বাজারে বিক্রী করতে বাধ্য হল সন্ধ্যা সাপুরিয়া। গ্রামের দোকানে দোকানে ঘুরে স্বামী লালু সাপুরিয়া বিক্রী করে দিল চাল। মাত্র কুড়ি টাকা কেজি দরে। নইলে এই লকডাউনে নাতিদের খাবার ও নিজের সুগারের ওষুধ চালানো সম্ভব ছিল না। মাথাপিছু সাত কেজি করে চাল পেয়েছে সন্ধ্যা সাপুরিয়ার পরিবার। পাতে তরকারির কথা ভাবছেই না এখন। চাল আর আটাটুকুই সব।
নিজের হাতে সাপ ধরেছেন সন্ধ্যা তিন মাস আগেই। বাড়ির পাশের মাঠেই সাপ বেরিয়েছিল চন্দ্রবোড়া। নিজের বাবা ও দাদুর কাছেই হাতে সাপ ধরতে শেখার প্রশিক্ষণ সন্ধ্যার। ৯০ সালে কাদি,নবগ্রামে সাপ ধরতে গিয়েছে নিয়মিত সন্ধ্যা। খরিস,চন্দ্রবোড়া,কালাচ ধরেছে পুরুষ সাপুরিয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার দিন। তখন সন্ধ্যাদের জীবন ছিল অন্যরকম।
নিজের হাতে সাপ ধরেছেন সন্ধ্যা তিন মাস আগেই। বাড়ির পাশের মাঠেই সাপ বেরিয়েছিল চন্দ্রবোড়া। নিজের বাবা ও দাদুর কাছেই হাতে সাপ ধরতে শেখার প্রশিক্ষণ সন্ধ্যার। ৯০ সালে কাদি,নবগ্রামে সাপ ধরতে গিয়েছে নিয়মিত সন্ধ্যা। খরিস,চন্দ্রবোড়া,কালাচ ধরেছে পুরুষ সাপুরিয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার দিন। তখন সন্ধ্যাদের জীবন ছিল অন্যরকম।
অতীতের স্মৃতিতে ভেসে যায় সন্ধ্যা। সন্তানের মত প্রিয় সাপ। সদ্য জন্মানো বাচ্চা সাপকে খাওয়ানো। রোদে শুকানো। নিয়ম করে খোলস ছাড়ানো। বাজার থেকে পছন্দের খাবার মাংস ও ডিম আনা। সন্ধ্যা সাপুরিয়াদের দিনযাপন থেকে কি যেন হারিয়ে গেছে আজ ! হাতে তৈরি সাপের বাক্স আছে। বাচ্চারা নেই। সাপ ধরার অনুমতি নেই। খেলা দেখানোর অবস্থা নেই। তাবিজ বানানোর তাড়া নেই। শুধু খালি বাক্সের দিকে তাকিয়ে স্মৃতিচারণা। সন্তান কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা নিত্যসঙ্গী। অভ্যাসের দুপর অলস। পড়ন্ত বিকেল শূন্য। দিন যায়। সন্তানকে ঘরে পায়না। স্বামী-সন্তান ও নিজের কয়েকটা সাপ নিয়ে কাটত বেশ দিন সন্ধ্যা সাপুরিয়াদের। এখন বদলে গেছে সব। অন্য মানুষ সাপ ধরে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাপুরিয়দের মন হু হু করে। যে সাপ সন্তান, তাদের ঠিক দেখাশুনা করার লোক আছে হয়ত। কিন্তু তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে যেন!
সন্ধ্যা সাপুরিয়াদের জীবন-জীবিকার সংকট কাটছেনা প্রায় দুই যুগ ধরে। স্বামীদের লাইসেন্স এখনও আটকে রয়েছে দপ্তরে। সর্পগন্ধা দিয়ে তৈরি মাদুলি আর তারা বিক্রী করে না। আন্টিভেনম তৈরিতে নেই সাপুরিয়া পরিবারের কোনও যোগদান। ওঁদের কাজে লাগিয়ে হয় সর্প প্রদর্শনী। লেখা হয়েছে বইও। হাজার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি ফাইলবন্দি। কিন্তু মহিলা সাপুরিয়ার কোল খালি পড়ে। জীবিকার সন্ধানে মেয়েরা লেখাপড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করছে। ভাই দোকানে কাজ করছে। কোথাও অধিকার হারানোর যন্ত্রণা তাদের পায়ে পায়ে জড়িয়ে ধরছে। তীক্ষ্ণ বেদনায় বিদ্ধ হচ্ছে মেয়ে সাপুরিয়ারা। আতর্নাদের ভাষা সকলের এক - “আমাদের সন্তান মরছে। আমাদের ডাকা হয়না। সন্তানদের নেই নিরাপত্তা। আজও গড়া হলনা সাপদের যোগ্য বাসস্থান।"
সন্ধ্যা বলে,“সাপকে কে না ভয় পায়! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও সাপের ভয়ে কলকাতার এক পার্কে হাঁটতে যেতেন না বলে শুনেছি। শুধু আমরাই পাই না। সরকার যদি একটু সদয় হয় মেয়ে সাপুরিয়া দের প্রতি। জীবনদায়ি ওষুধ তৈরি হচ্ছে। বাইরে থেকে আনা হচ্ছে বিষ। জীবন বিপন্ন হচ্ছে মানুষের এবং সাপুরিয়া মায়েরা বিপন্ন হচ্ছে। তাছাড়া খালি হাতে সাপ ধরায় সমস্যায় পড়তেও হয়েছে বহুবার। কামড় খেয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যবহৃত চিকিৎসায় ভরসা করেন সাপুরিয়া মায়েরা। তাই জরুরি সর্পবিদ্যা অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য কলেজ।"
সন্ধ্যার বয়স বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে অসুখও বাড়ছে। এদিকে রোজগার বন্ধ। মন খারাপ করে বলে, "হাত গুটিয়ে বাড়িতে বসে স্বামী ও দুই ছেলে। মুখে মাস্ক পরে বসে আছে। সারাদিন হাত ধুয়েই কাটছে। বাজার হাটের পয়সা নেই। রেশন না পেলে এ যাত্রায় মরে যেতাম। ঘরে বসে পেটটা তো চলছে কিন্তু কতদিন আর চলবে জানিনা! "
মোড়গ্রাম,সাঁকোবাজার, সাগরদিঘী,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment