সোনামনির লকডাউন যাপন
পড়াশোনা নাকি গরীব মেয়েদের জন্য নয়। তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে মাথার বোঝা না নামলে মুশকিল। এটাই বিশ্বাস সোনামনির। সে বেজায় খুশি যে লকডাউনের আগেই তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুই জন কমেছে। দুই মেয়ের বিয়ে না হয়ে গেলে বড় ও ভারি সংসারের চাকা বন্ধ হয়ে যেত লকডাউনে! দেড় মাসের বেশি সোনামনি বিড়ি বাঁধেনি লকডাউনের জন্য। এখন বিড়ি বাঁধার সূযোগ এলেও শরীর ঠিক চলছে না। তাই বিড়ির পাতা নেয়নি। সোনামনি সাহার বিয়ে পনেরো বছর বয়সে। তারপর সংসারের ভার মাথায় এসে পড়ে। পরিবার বেকার স্বামীর হাতে সোনামনিকে তুলে দিয়ে দায় সারে। নিজের বিড়ি বাঁধার বাইরে বাপের বাড়ি থেকেও সাহায্য আসতে থাকে। কিন্তু এভাবে হাত পেতে কতদিন? তাই অবশেষে স্বামী কে সাকার করার দায় সোনামনি মাথায় তুলে নেয়। নিজের বিড়ি বাঁধা থেকে জমানো টাকা ও বাবার সাহায্য নিয়ে স্বামীকে কিনে দেয় ভ্যান। দুই মেয়ে ও এক ছেলে মানুষ করে এভাবেই।
নিজে টাকা উপার্জন করলেও সোনামনির লকডাউনে বড় চ্যালেঞ্জ স্বামীর ঘরে বসে যাওয়া। বছর পাঁচেক আগে সোনামনির বাবা বেকার জামাইকে ভ্যান কিনতে সাহায্য করে। তারপর সেটা থেকে ভালো আয় না হওয়ায় আবার কিছুদিন আগে টুকটুক কিনতে সাহায্য করে। তারপরেই লকডাউনে ঘরে বসে যায় স্বামী। এতদিন সংসারের জন্য হাজার, দেড় হাজার বিড়ি বেঁধে এসেছে সোনামনি। এখন শরীর সঙ্গ ছেড়েছে। তিনশো বিড়ি বাঁধতেই হাঁপিয়ে উঠছে। তবু লকডাউনে উপার্জন মার যাওয়ায় মন খারাপ সোনামনির।
নিজের বাবার দৌলতে একটা গ্যাসের সিলিন্ডার ঘরে আনতে পেরেছে সোনামনি কিন্তু রান্না সেই বাড়ির আখাতেই হয়। লকড়ি জোগাড় করে করতে হয়। বাড়িতে স্বামী ও ছেলের ভার তার মাথার উপরেই। সংসার এভাবেই চলেছে। লকডাউনেও নিজের বাপের বাড়ির সাহায্য নিয়ে চলেছে সোনামনি। ঘরে চাল আছে। কিন্তু তার বাইরের ব্যবস্থা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে নি। তবে ঝড়ের গতি তেমন আকার না নেওয়ায় মাথার উপরে টালি বেঁচে আছে। আশ্রয়হীনতা থেকে রেহাই পেয়েছে সোনামনি।
সোনামনি নিজের অন্দরমহলের কাঁটাছেড়া বেশি না করে একটিই কথা বলে,"গরীবের কী দাম আছে! অভাবের সংসারে লকডাউন, বৃষ্টি- ঝড়ের দাপট চললে মরে যাওয়ার কথা কিন্তু তা তো হয় না। প্রতিবার টাল ভাঙা পড়ে, প্রতিবার আবার মাথার ছাদের মেরামতি চলে! প্রতিবার বৃষ্টিতে ত্রিপল ছেঁড়ে, প্রতিবার কিনতে হয়।" সোনামনি বলে, "দুই মাস একটা মানুষ টুকটুক না চালিয়ে ঘরে বসে থাকলে সে ঘর কেমন থাকবে! বেঁচে আছি। কিন্তু মানুষের অধিকার কেউ দ্যায় না।" লকডাউনে চাল,আটা পেলাম। কিন্তু দুই মাস আট দিন কি তাতে চলে!
সাহাপাড়া,লালখানদিয়ার ,মুর্শিদাবাদ
"লকডাউনে ঘরে তো আমরা বেকার। সরকার থেকে চাল দিয়েছে। নগদ পাঁচশো টাকাও দিয়েছে ব্যাংকের খাতায়। কিন্তু সে টাকায় তো একদিন মাংসও খাওয়া হবে না। সারা মাস তরকারি,মাছ খাওয়া হবে কি করে? ঘরে রাখা বাড়তি চাল যদি আজ বেঁচে দিই তো কদিন ডাল -তরকারি হবে?" প্রশ্ন বিড়ি শ্রমিক সোনামনি সাহার। প্রায় দশ বছরের বেশি বিড়ি বাঁধছে সোনামনি। নেই কোনও কার্ড। নেই শ্রমিকের স্বীকৃতি।
পড়াশোনা নাকি গরীব মেয়েদের জন্য নয়। তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে মাথার বোঝা না নামলে মুশকিল। এটাই বিশ্বাস সোনামনির। সে বেজায় খুশি যে লকডাউনের আগেই তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুই জন কমেছে। দুই মেয়ের বিয়ে না হয়ে গেলে বড় ও ভারি সংসারের চাকা বন্ধ হয়ে যেত লকডাউনে! দেড় মাসের বেশি সোনামনি বিড়ি বাঁধেনি লকডাউনের জন্য। এখন বিড়ি বাঁধার সূযোগ এলেও শরীর ঠিক চলছে না। তাই বিড়ির পাতা নেয়নি। সোনামনি সাহার বিয়ে পনেরো বছর বয়সে। তারপর সংসারের ভার মাথায় এসে পড়ে। পরিবার বেকার স্বামীর হাতে সোনামনিকে তুলে দিয়ে দায় সারে। নিজের বিড়ি বাঁধার বাইরে বাপের বাড়ি থেকেও সাহায্য আসতে থাকে। কিন্তু এভাবে হাত পেতে কতদিন? তাই অবশেষে স্বামী কে সাকার করার দায় সোনামনি মাথায় তুলে নেয়। নিজের বিড়ি বাঁধা থেকে জমানো টাকা ও বাবার সাহায্য নিয়ে স্বামীকে কিনে দেয় ভ্যান। দুই মেয়ে ও এক ছেলে মানুষ করে এভাবেই।
নিজে টাকা উপার্জন করলেও সোনামনির লকডাউনে বড় চ্যালেঞ্জ স্বামীর ঘরে বসে যাওয়া। বছর পাঁচেক আগে সোনামনির বাবা বেকার জামাইকে ভ্যান কিনতে সাহায্য করে। তারপর সেটা থেকে ভালো আয় না হওয়ায় আবার কিছুদিন আগে টুকটুক কিনতে সাহায্য করে। তারপরেই লকডাউনে ঘরে বসে যায় স্বামী। এতদিন সংসারের জন্য হাজার, দেড় হাজার বিড়ি বেঁধে এসেছে সোনামনি। এখন শরীর সঙ্গ ছেড়েছে। তিনশো বিড়ি বাঁধতেই হাঁপিয়ে উঠছে। তবু লকডাউনে উপার্জন মার যাওয়ায় মন খারাপ সোনামনির।
নিজের বাবার দৌলতে একটা গ্যাসের সিলিন্ডার ঘরে আনতে পেরেছে সোনামনি কিন্তু রান্না সেই বাড়ির আখাতেই হয়। লকড়ি জোগাড় করে করতে হয়। বাড়িতে স্বামী ও ছেলের ভার তার মাথার উপরেই। সংসার এভাবেই চলেছে। লকডাউনেও নিজের বাপের বাড়ির সাহায্য নিয়ে চলেছে সোনামনি। ঘরে চাল আছে। কিন্তু তার বাইরের ব্যবস্থা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে নি। তবে ঝড়ের গতি তেমন আকার না নেওয়ায় মাথার উপরে টালি বেঁচে আছে। আশ্রয়হীনতা থেকে রেহাই পেয়েছে সোনামনি।
সোনামনি নিজের অন্দরমহলের কাঁটাছেড়া বেশি না করে একটিই কথা বলে,"গরীবের কী দাম আছে! অভাবের সংসারে লকডাউন, বৃষ্টি- ঝড়ের দাপট চললে মরে যাওয়ার কথা কিন্তু তা তো হয় না। প্রতিবার টাল ভাঙা পড়ে, প্রতিবার আবার মাথার ছাদের মেরামতি চলে! প্রতিবার বৃষ্টিতে ত্রিপল ছেঁড়ে, প্রতিবার কিনতে হয়।" সোনামনি বলে, "দুই মাস একটা মানুষ টুকটুক না চালিয়ে ঘরে বসে থাকলে সে ঘর কেমন থাকবে! বেঁচে আছি। কিন্তু মানুষের অধিকার কেউ দ্যায় না।" লকডাউনে চাল,আটা পেলাম। কিন্তু দুই মাস আট দিন কি তাতে চলে!
সাহাপাড়া,লালখানদিয়ার ,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment