শান্তিলতার লকডাউনের দিন
অতিমারি যখন ঘরে আটকে রেখেছে মানুষদের,তখন আশালতারা গ্রামে গ্রামে মানুষদের সচেতন করার কাজ চালিয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ মহিলাই হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজ করার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। আবার অতিমারি নিয়েও খুব উদ্বিগ্ন ছিল না। ওদের বিশ্বাস ছিল অসুখটি শুধু বাইরে কাজে যাওয়া মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শান্তিলতাদের প্রতিদিন নিয়ম করে গ্রামে গিয়ে বার বার বলার পরই সচেতন হয় সেখানকার মেয়েরা। গ্রামের ভেতরে জল কাদা ভেঙ্গে যেতে গিয়ে শান্তিলতা নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবুও কাজ চলতেই থাকে।
শান্তিলতার প্রতি মুহুর্তেই চ্যালেঞ্জ। জীবনের শুরুটাও কি এত ক্লান্তিকর হয়! শান্তিলতা পৃথিবীর আলো দেখার পরই হারায় মাকে। তারপর চলে যায় বাবা। দাদুর কাছে থেকেই বেড়ে ওঠে ছোট্ট শান্তিলতা। মাধ্যমিক পাশের পর দাদুর মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে যায় শান্তিলতার পড়া। বসে না থেকে ফার্স্ট এইড ও ব্রতচারীর ট্রেনিং নেয়। সেই সুবাদে আদিবাসী নৃত্যদলের কাছাকাছি আসে শান্তিলতা। তারপর দেশের নানা জায়গায় আদিবাসী নৃত্যদলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় শান্তিলতা। অনুষ্ঠান পিছু দলে আসে চার হাজার টাকা। এভাবেই একের পর এক কাজের সূযোগ আসে শান্তিলতার। নানারকম সার্ভের কাজেও যুক্ত হয়। পয়সার জন্য সবরকমের কাজের সন্ধানে লেগে থাকে শান্তিলতা।
অতিমারির দিন ছিল খুব কঠিন। প্রতিদিন প্রত্যন্ত গ্রামে যাওয়া। নিরাপদ থাকার নিয়মাবলী প্রচার করা। সর্দি জ্বরে ডাক্তারের কাজে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া। দরকারি ওষুধ বলে দেওয়া। তারপর ফিরে এসে সংসারের দায়িত্ব পালন। আবার ডাক পড়লে বিকেল বেলায় অন্য একটি গ্রামে যাওয়া। সমস্যা ছিল নিজেকে সংক্রমণ থেকে মুক্ত করা। অন্যদিকে পরিবারের মানুষদের সুস্থ রাখা। অবশেষে কোরোনা যুদ্ধে জিতেই যায় শান্তিলতারা। এলাকাকে অতিমারির কবল থেকে মুক্ত রাখে। সচেতনতার পাঠে এখনও সংযমী এলাকার মানুষ।
নবগ্রাম,মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment