গোলাপির লকডাউন যাপন
বাচ্চা বায়না ধরেছে দোকান যাবে। গ্রামের ভেতরের দোকান খোলা। কিন্তু গোলাপির সাহস নেই। তিন ছেলে -মেয়ের হাত ধরে নিয়ে দোকানের দিকে যাওয়ার। কি কি খেতে চাইবে বাচ্চারা কেজানে! এদিকে হাতে মাত্র কুড়ি টাকা আছে গোলাপির। তাও মা এসে বাচ্চাদের কিছু কিনে খাওয়ার জন্য দিয়ে গিয়েছিল। গোলাপি টাকা কোথায় পাবে? স্বামী তো বাড়িতে বসে পাক্কা দুই মাস। সংসার তো বাপের বাড়ির লোকই টেনে দিচ্ছে। কিন্তু কতদিন!
গোলাপি স্কুলে যায়নি। সময়ের আগেই বিয়ে। তিনটে বাচ্চা নিয়ে পাখির বাসার মত দেখতে ঘরে বাস। ডাল -পাতা-কঞ্চি দিয়ে তৈরি গোলাপির ঘর। আবাস যোজনা ও সরকারি প্রকল্প মাথা হেঁট করবে। আশ্চর্য হয়ে মানুষ প্রশ্ন করবে গোলাপী এখনো বাড়ি পায়নি কেন? যদিও এটাই গোলাপীর তাজমহল। বিয়ে হয়ে গেছে মানেই শাহজাহান পেয়ে গেছে। জীবনের বড় পরীক্ষায় পাশ করে গেছে। লকডাউন না এলে গোলাপি জানতই না যে তিন ছেলে -মেয়ের জন্য প্রতিদিন ভাত জোগাড় করা এত বড় চ্যালেঞ্জ। স্বামীর রোজগার শূন্য। হাতে নগদ পয়সা নেই।
"খ্যাতে দিলে ভালো হয়। ঘর যদি দেয় তো খুবই ভালো হয়" নিষ্পাপ মন নিয়ে বলে গোলাপি। স্বামী পাইপের কাজ করে। কখনো অদক্ষ শ্রমিকের কাজ করে। কাজে গেলে টাকা আনে। নইলে বাড়িতে বসে। যে টাকা আনে তা ফুরালে আবার কাজে যায়। লকডাউনে চাল আটা যা পেয়েছে তাতেই চলছে। লকড়ির অভাব। তাই দুইবেলা ভাতের চাল ফুটানো কঠিন। পেঁপে,শাক, ডাঁটা জোগাড় করে দিন চললেও নগদ পয়সা হাতে না থাকায় চায়ে চিনি দেওয়া মুশকিল।
বাচ্চা আবার স্কুলে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণি। কতদিন যাবে গোলাপি জানেনা। বাপের হাত ধরে কাজেও নামতে হতে পারে! গোলাপি বলে, "আমি তো স্কুলে যাইনি তাতে কি হয়েছে? আমি কি করতে পারি না?" একদম তাই। গোলাপীদের ছেলেমেয়েদের কাছে পড়াশুনা এক রকম বিলাসিতা। এটা না শিখেও মানুষ বাঁচে এ তাদের স্থির বিশ্বাস। পড়াশুনা নামক বিলাসিতা দূর করার জন্য গোলাপির ছেলেদের হাত ধরার কেউ নেই। দিন বদলেছে। মানুষ অসাধ্য সাধন করেছে । কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মত আড়াল থেকে গেছে গোলাপিদের জীবনে সুদিন ফেরার গল্প। লকডাউন তো গোলাপিদের জীবনটাকেই আলেয়ার মত ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এত বড় বিপদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে তাদেরও পাল্টা চ্যালেঞ্জ "রোগে মরতাম ব্যাপার না৷ কিন্তু এমনি করে ভিক্ষা করাবে ক্ষ্যামতা থাকতে? আমাদের তো জাত গেল।"
শেখপাড়া, কুলগাছি,ভগবানগোলা ১
No comments:
Post a Comment