নূর খাতুনের লকডাউন যাপন
"কাজ ঢুড়ে পাইনিখো! তাই ঘর ছেড়ে ম্যাশিনের কাজে বিদ্যাশ যাওয়া।" কারখানার কাজে নিযুক্ত নূর খাতুন একদম পেটের দায়ে পাঞ্জাব পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রায় নয় বছর ধরে কাজ করছেন। লকডাউনে নানা ঝামেলা অতিক্রম করে ঘরে ফিরেছেন। সমস্যা হল নূর নিজের বয়সটাও সঠিক জানেন না। আবার সাবলীল ভাবে বলে, "কিছুই বুঝতুক না তখন বিহা। বাপ কে কাজ করতে য্যাতে দেখিনি। ভাইরা মাঠে ঘাটে খাটতক। ওয়্যাই লেগে স্কুলে যায়নি। পড়ায়নিখো।"
উনি আসলে একজন শ্রমিক সেটাও বোঝেন না সেভাবে। তাই শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তার কিছুই জানা নেই। সকাল আটটায় দু হাজার টাকার ভাড়া ঘর থেকে ফ্যাক্টরি যেতেন । ফিরে আসেন রাত আটটায়। এত ঘন্টা ধরে মেশিনে মাল তুলতে সহায়তা করে তারপর প্যাকেটিং এর কাজ করতেন। রবিবারেও কাজ চলে। "শুধু কাজে ঢিল পড়লে ছুটি"। নূর বলে, "দুইডা টেশিন। একডা সামনে। একডা পিছনে। একডাতে নাট বল্টু চড়াতু। তারপর আর এক জাগায় এর এক টেশিনে ট্রেসিং করতু। তাপর গনতি করতু। তারপর প্যাকেট বানাতু।" একদিনে তিন জায়গায় কাজের নামে তাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয় নূরকে। মাত্র দুশো টাকার বিনিময়ে। এভাবেই নাট বল্টু তৈরির সহায়ক হিসেবে কাজ করেন লুধিয়ানায় এক যন্ত্রাংশ নির্মাণের কোম্পানীতে । নূর এটাকেই কাজ করা বলে জানে। সেই কাজ সে সংসারের জন্য করছে। কারণ সে গরিব। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে স্বামীর একার উপার্জন যথেষ্ট নয়। তাই তার কাজ করাকে সে নিয়তি বলেই মেনে এসেছে। স্বামীও পাঞ্জাবে তামা -লোহা কাটার কাজ করে।
নূর বাড়ি ফিরে এসে পড়েছে বিপদে। লকডাউনেরর জন্য টাকা পায়নি। স্বামীর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জমানো টাকা খেয়ে দীর্ঘ দেড় মাস লড়াই এর পর ফিরে এসেছে ইদের আগে গ্রামে। ছেলে মেয়েদের নতুন জামা দূরে থাক খাবারও কিছু কিনতে পারেনি। নিজে একটা নতুন শাড়িও পরতে পারেনি ইদের নামাজের দিন।
লকডাউনে তড়িঘড়ি পালিয়ে এসেছে দেশে। এখনোও পাঞ্জাবে ঘরে সব তালাবন্দি। কখন ফিরতে পারবে জানেনা। ফিরে কাজ থাকবে কিনা তাও জানেনা। এদিকে ঘর ভাড়ার টাকা তো গুনতে হবে ভেবেই মাথায় হাত নূরের। মহিলা শ্রমিকের আলাদা স্বীকৃতি নেই। সামান্য টাকায় নানারকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় তাকে। পারিশ্রমিক সামান্য। প্রতিদিন শ্রম চুরি। কিন্তু নূর কাজ করে খায় এতে খুব খুশি। "ব্যাটাছেলের সঙ্গে কথা কহিতে দেয় না। ম্যায়াদের সঙ্গে ম্যায়ারা একসঙ্গে কাজ করত। নিজের নিজের পায়সা নিয়ে বাড়ি আসতু। কাজে ভালো লাগত।"
এই হাড় ভাঙা বেহিসেবী কাজে নূরদের কোনোও অভিযোগ নেই। শেষ কথা "সাহাব খুব ভালো। ব্যাটাছেলেদের আলাদা আর মেয়্যাছেলেদের আলাদা ঘর কাজের।" এদের কাছে ভালো হতে গেলে বিশেষ কোনোও গুনের দরকার হয়না। এতটা সরল মহিলাদের শ্রমিক হিসেবে বছরের পর বছর অতিরিক্ত খাটিয়ে কোম্পানী মুনাফা করতে থাকে। কিন্তু বিপদে একমাসের মাইনে আগাম দিয়ে বাড়ি পাঠানোর দায় মাথায় নেয় না।
রুকুনপুর,হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ
"কাজ ঢুড়ে পাইনিখো! তাই ঘর ছেড়ে ম্যাশিনের কাজে বিদ্যাশ যাওয়া।" কারখানার কাজে নিযুক্ত নূর খাতুন একদম পেটের দায়ে পাঞ্জাব পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রায় নয় বছর ধরে কাজ করছেন। লকডাউনে নানা ঝামেলা অতিক্রম করে ঘরে ফিরেছেন। সমস্যা হল নূর নিজের বয়সটাও সঠিক জানেন না। আবার সাবলীল ভাবে বলে, "কিছুই বুঝতুক না তখন বিহা। বাপ কে কাজ করতে য্যাতে দেখিনি। ভাইরা মাঠে ঘাটে খাটতক। ওয়্যাই লেগে স্কুলে যায়নি। পড়ায়নিখো।"
উনি আসলে একজন শ্রমিক সেটাও বোঝেন না সেভাবে। তাই শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তার কিছুই জানা নেই। সকাল আটটায় দু হাজার টাকার ভাড়া ঘর থেকে ফ্যাক্টরি যেতেন । ফিরে আসেন রাত আটটায়। এত ঘন্টা ধরে মেশিনে মাল তুলতে সহায়তা করে তারপর প্যাকেটিং এর কাজ করতেন। রবিবারেও কাজ চলে। "শুধু কাজে ঢিল পড়লে ছুটি"। নূর বলে, "দুইডা টেশিন। একডা সামনে। একডা পিছনে। একডাতে নাট বল্টু চড়াতু। তারপর আর এক জাগায় এর এক টেশিনে ট্রেসিং করতু। তাপর গনতি করতু। তারপর প্যাকেট বানাতু।" একদিনে তিন জায়গায় কাজের নামে তাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয় নূরকে। মাত্র দুশো টাকার বিনিময়ে। এভাবেই নাট বল্টু তৈরির সহায়ক হিসেবে কাজ করেন লুধিয়ানায় এক যন্ত্রাংশ নির্মাণের কোম্পানীতে । নূর এটাকেই কাজ করা বলে জানে। সেই কাজ সে সংসারের জন্য করছে। কারণ সে গরিব। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে স্বামীর একার উপার্জন যথেষ্ট নয়। তাই তার কাজ করাকে সে নিয়তি বলেই মেনে এসেছে। স্বামীও পাঞ্জাবে তামা -লোহা কাটার কাজ করে।
নূর বাড়ি ফিরে এসে পড়েছে বিপদে। লকডাউনেরর জন্য টাকা পায়নি। স্বামীর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জমানো টাকা খেয়ে দীর্ঘ দেড় মাস লড়াই এর পর ফিরে এসেছে ইদের আগে গ্রামে। ছেলে মেয়েদের নতুন জামা দূরে থাক খাবারও কিছু কিনতে পারেনি। নিজে একটা নতুন শাড়িও পরতে পারেনি ইদের নামাজের দিন।
লকডাউনে তড়িঘড়ি পালিয়ে এসেছে দেশে। এখনোও পাঞ্জাবে ঘরে সব তালাবন্দি। কখন ফিরতে পারবে জানেনা। ফিরে কাজ থাকবে কিনা তাও জানেনা। এদিকে ঘর ভাড়ার টাকা তো গুনতে হবে ভেবেই মাথায় হাত নূরের। মহিলা শ্রমিকের আলাদা স্বীকৃতি নেই। সামান্য টাকায় নানারকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় তাকে। পারিশ্রমিক সামান্য। প্রতিদিন শ্রম চুরি। কিন্তু নূর কাজ করে খায় এতে খুব খুশি। "ব্যাটাছেলের সঙ্গে কথা কহিতে দেয় না। ম্যায়াদের সঙ্গে ম্যায়ারা একসঙ্গে কাজ করত। নিজের নিজের পায়সা নিয়ে বাড়ি আসতু। কাজে ভালো লাগত।"
এই হাড় ভাঙা বেহিসেবী কাজে নূরদের কোনোও অভিযোগ নেই। শেষ কথা "সাহাব খুব ভালো। ব্যাটাছেলেদের আলাদা আর মেয়্যাছেলেদের আলাদা ঘর কাজের।" এদের কাছে ভালো হতে গেলে বিশেষ কোনোও গুনের দরকার হয়না। এতটা সরল মহিলাদের শ্রমিক হিসেবে বছরের পর বছর অতিরিক্ত খাটিয়ে কোম্পানী মুনাফা করতে থাকে। কিন্তু বিপদে একমাসের মাইনে আগাম দিয়ে বাড়ি পাঠানোর দায় মাথায় নেয় না।
রুকুনপুর,হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment